Friday, July 15, 2011

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত - ১


কিছু দিন আগে আমি পবিত্র শবে বরাত - সর্ম্পকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম । সেই পোস্টে বাকরুদ্ব, ম জ বাসার, আলোর দিশারী, ফালতু-খান, আই কবির ইত্যাদি নিকের ব্লগাররা বলেছিল পবিত্র শবে বরাত বলতে কিছু নেই এবং আমাকে রেফারেন্স দিতে বলেছিল । সেই কারণেই এই ব্লগটি লেখা ।


অনেকে বলে থাকে কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে ‘শবে বরাত’ নামে কোন শব্দের নেই । প্রশ্ন হচ্ছে কেন নেই ?

‘ছলাত’ শব্দটি আরবী। যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত পাঁচবার পড়া প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (শর্ত সাপেক্ষে) ফরয। ‘ছলাত’ শব্দটিকে ফারসী ভাষায় বলা হয় ‘নামায।’ উর্দূতেও নামায বা ‘বন্দিগী।’ বাংলায় ‘প্রার্থনা।’ ইংরেজিতে Prayer । আরো অন্যান্য ভাষাভাষীর লোকেরা অন্যান্য ভাষায় ‘ছলাত’ শব্দকে বুঝিয়ে থাকে যার মূল ভাব, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।
অনুরূপভাবে ‘রোযা’ শব্দটি ফারসী। আরবীতে বলা হয় ‘ছিয়াম।’ ইংরেজীতে বলে Fasting । বাংলায় আমরা বলে থাকি অভূক্ত থাকা, পানাহার ও গুনাহ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।যার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। কিন্তু' বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহার হলেও সকল ভাষার মূল বিষয় হচ্ছে ‘ছিয়াম।’
তদ্রূপ ‘শবে বরাত’ ফারসী ভাষায় ব্যবহার হয় যার বাংলায় অর্থ হচ্ছে ভাগ্যরজনী বা মুক্তির রাত। কুরআন শরীফে শবে বরাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ শব্দের দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে এবং বিশ্ববিখ্যাত হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ শব্দের দ্বারা বুঝানো হয়েছে যা সর্বজনমান্য তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাবসমূহে উল্লেখ হয়েছে।

পাক ভারত উপমহাদেশে উক্ত বরকতময রজনী ‘শবে বরাত’ হিসেবে প্রাধান্য লাভ করার কারণ:

আরবী ও ফারসী ভাষার দেশ থেকে অসংখ্য আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইসলামের মর্মবাণী এদেশের মানুষদের মাঝে প্রচার করে তাদেরকে কালিমা শরীফ পড়িয়ে মুসলমান বানিয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। বিশেষ করে ফারসী ভাষাভাষী আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য। উনাদের কারণে ফারসী ভাষাগুলো আমাদের কাছে ক্রিয়া করে প্রাধান্য লাভ করেছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে ‘শবে বরাত।’
উল্লেখ্য, এক ভাষায় অপর ভাষার শব্দের মিশ্রণ মূলত একটি অনিবার্য ঐতিহ্য। প্রায় সব ভাষায়ই এর নিদর্শন রয়েছে। আমাদের বাংলা ভাষায়ও এর নিদর্শন অনেক। এবং এটি প্রায় সব ভাষারই প্রকৃতি।

কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই ‘শবে বরাত’ প্রমাণিত

শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে বরকত পূর্ণ রাত হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)
উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা অনুসরনীয় মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন ।
বিশ্ববিখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন-
অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান তথা অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)কে বুঝানো হয়েছে। এবং উহার নামে নামকরণ করা হয়েছে যেমন লাইলাতুর রহমত তথা রহমতের রাত, লাইলাতুল মুবারাকাতু তথা বরকতের রাত। লাইলাতুছ ছেক ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণের রাত তথা ভাগ্য রজনী।”
আর বরকতপূর্ণ রাত দ্বারা শবে বরাত তথা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ বহন করে তার পরবর্তী আয়াত শরীফের يفرق (বণ্টন করা হয়।) শব্দ দ্বারা। কেননা তাফসীর জগতের সকল তাফসীরে সমস্ত মুফাসসীরীনে কিরাম উনারা يفرق শব্দের তাফসীর করেন يكتب (লেখা হয়) يفصل (ফায়ছালা করা হয়) يتجوز (বণ্টন বা নির্ধারণ করা হয়) يبرم (বাজেট করা হয়) “فيصله‘ (নির্দেশনা দেয়া হয় বা ফায়ছালা করা হয়) ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর, তাফসীরে মাযহারী এর ৮ম খন্ডের ৩৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
“প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (সূরা আদ দুখানের ৩ নম্বর আয়াত শরীফ) ليلة مباركة হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের রাত। এ রাত্রে সারা বৎসরের কাজ কর্মের ফায়ছালা করা হয় এবং কতজন জীবিত থাকবে ও কতজন মারা যাবে তারও ফায়ছালা করা হয়। অতঃপর এ ফায়ছালার থেকে কোন কিছু বেশি করা হয় না এবং কোন কমতিও করা হয় না। অর্থাৎ কোন প্রকারের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয় না। হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে মাইসারা ইবনে আখফাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, শা’বান মাসে পরবর্তী শা’বান মাস পর্যন্ত মৃত্যুর ফায়ছালা করে দেয়া হয়। এমনকি লোকেরা যে বিবাহ করবে, সেই বৎসর তার থেকে কত জন সন্তান জন্মগ্রহন করবে তার তালিকা এবং তার মৃত্যুর তালিকাও প্রস্তুত করা হয় ওই বৎসরে অর্ধ শাবানের রাতে তথা শবে বরাতে।
আবুদ্বহা এর বর্ণনায় এসেছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, শা’বানের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৫ই শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে আল্লাহ পাক সমস্ত কিছুই ফায়ছালা করেন, আর রমাদ্বানের ক্বদর রাতে (শবে ক্বদরে) সেই ফায়ছালার তালিকা (কপি) বাস্তবায়ন করার জন্য বাস্তবায়নকারীদের কাছে অর্পণ করা হয়। (চলবে)
Source:http://www.somewhereinblog.net/blog/nihan13/29208185

No comments:

Post a Comment