Saturday, July 16, 2011

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত

উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!

তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা হাদীছ শরীফে শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتا العيدين

অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)

এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ করবে।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ‘শবে বরাত’ পালন থেকে বিরত থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ শবে বরাতসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।

অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাও শবে বরাত প্রমাণিত

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত হাদীছ গ্রন্থ হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘শু‘য়াবুল ঈমান’ ৩য় খ-ের ৩৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১২২)

اخبرنا ابو عبد الله الحافظ ومحمد بن موسى قالا نا ابو العباس الأصم نا محمد بن على الوراق نا سعيد بن سليمان نا ليث بن سعد عن عقيل عن الزهرى عن عثمان عن محمد بن المغيرة بن الأخنس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تقطع الاجال من شعبان الى شعبان قال ان الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه فى الموتى.

اخبرنا عبد الخالق بن على المؤذن انا ابو جعفر محمد بن بسطام القرشى بقرية وانه نا ابو جعفر احمد بن محمد بن جابر حدثنى احمد بن عبد الكريم نا خالد الحميصى عن عثمان بن سعيد بن كثير عن محمد بن المهاجر عن الحكم بن عتيبة عن ابراهيم قال قال على رضى الله تعالى عنه رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة النصف من شعبان قام فصلى اربع عشرة ركعة ثم جلس بعد الفراغ فقرأ بأم القران اربع عشرة مرة وقل هو الله احد اربع عشرة مرة وقل اعوذ برب الفلق اربع عشرة مرة وقل اعوذ برب الناس اربع عشرة مرة والاية الكرسى مرة (لقد جاءكم رسول من انفسكم) الاية فلما فرغ من صلاته سألته عما رأيت من صنعه قال من صنع مثل الذى رأيت كان له عشرين حجة مبرورة وصيام عشرين سنة مقبولة فان اصبح فى ذلك اليوم صائما كان له كصيام ستين سنة ماضية وسنة مستقبلة

অর্থ: হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আবু আব্দুল্লাহ আল হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত মুহম্মদ ইবনে মুসা রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনারা উভয়েই … হযরত মুহম্মদ ইবনে মুগীরাহ ইবনে আখনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এক শা’বান তথা শবে বরাত থেকে পরবর্তী শা’বান তথা শবে বরাতের আগমন পর্যন্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, ওই বৎসর যে ব্যক্তি বিবাহ করবে তার থেকে সন্তান জন্ম লাভ করবে এবং ওই বৎসর কখন মৃত্যুবরণ করবে, তার তালিকাও প্রস্তুত করা হয় ওই শবে বরাতে।

এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত আছে যেটা আমাদের কাছে হযরত আব্দুল খালিক্ব ইবনে আলী মুয়াযিন রহমতুল্লাহি আলাইহি…. হযরত ইব্রাহিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে আমি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখলাম তিনি উঠলেন এবং ১৪ রাকা‘আত (শবে বরাতের) নামায পড়লেন অতঃপর নামায শেষ করে বসলেন। এবং উম্মুল কুরআন তথা সূরা ফাতিহা ১৪ বার, সূরা ইখলাছ ১৪ বার, সূরা ফালাক্ব ১৪ বার, সূরা নাস ১৪ বার এবং আয়াতুল কুরসী একবার (লাক্বাদ জায়াকুম রসূলুম মিন আনফুসিকুম) আয়াত শরীফ পাঠ করলেন। অতঃপর যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নামায শেষ করলেন তখন আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ওই শবে বরাতে যা যা করতে দেখেছি সে সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। জবাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি আমাকে যা করতে দেখেছেন ওইসব কাজ কোনো ব্যক্তি পালন করলে তার জন্য বিশটি মাবরুর তখা কবূল হজ্জের ছওয়াব দেয়া হবে এবং বিশ বৎসরের কবূলিয়াত রোযার ছওয়াব দেয়া হবে। এবং পরের দিন যদি সে রোযা রাখে তখন ওই শবে বরাতের রোযাদারকে সামনের তথা আগামী এক বৎসরের এবং পিছনের এক বৎসরের ছওয়াব দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে-

(১২৩-১২৭)

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال تقضى الاقضية كلها ليلة النصف من شعبان وتسلم الى اربابها ليلة السابع والعشرين من شهر رمضان

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, সমস্ত ফায়ছালাকৃত বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয় অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে। আর ওই নির্ধারিত বিষয়সমূহকে জারি বা চালু করার জন্য তা পেশ করা হয় কার্যকারী ফেরেশতাদের হাতে রমাদ্বান মাসের ২৭ তারিখ শবে ক্বদরে।

তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ১৩তম খ-ের ১১৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে খাযিন, বাগবী, দুররি মানছুর, তাবারী, ইত্যাদি তাফসীরসমূহ।

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট থেকেও হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে-

(১২৮)

عن حضرت عكرمة رضى الله تعالى عنه انه قال فى الاية (اى ان الليلة المباركة هى ليلة البراءة) فى ليلة النصف من شعبان يبرم امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم احد

অর্থ: হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি লাইলাতুম মুবারাকা তথা শবে বরাত দ্বারা ১৫ই শাবান তথা অর্ধ শা’বানের রাতকেই উল্লেখ করেছেন। আর এই অর্ধ শা’বানের রাতেই আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করা হয় এবং ফায়ছালা করা হয় জীবিত ও মৃতদের। এমনকি হাজীদেরও তালিকাও প্রস্তুত করা হয় ওই শবে বরাতে। আর শবে বরাতে যা ফায়ছালা করা হয় তার থেকে কোনো কমবেশি করা হয় না। অর্থাৎ বাড়ানো ও কমানো হয় না।

অনেকেই বলে থাকে পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ হয়েছে রমাদ্বান শরীফ-এর মাসে লাইলাতুল ক্বদরে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা বাক্বারায় উল্লেখ করেন-

(১২৯)

شهر رمضان الذى انزل فيه القران

পবিত্র কুরআন শরীফ রমাদ্বান মাসে অবতীর্ণ করা হয়েছে।

আর সূরা আদ দুখানেও আল্লাহ পাক তিনি বলেন-

(১৩০)

انا انزلناه فى ليلة مباركة

নিশ্চয়ই আমি উহা তথা কুরআন শরীফ অবতীর্ণ করেছি মুবারকময় রজনীতে। এখানে লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা যদি শবে বরাতের রাতকে গণনা করা হয় তাহলে উভয় রাতের সমাধান কি?

উল্লেখ্য যে, এ ব্যাপারে অসংখ্য তাফসীর ও হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতির মাধ্যমে সমাধান দেয়া হয়েছে যে, লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতকেই বুঝানো হয়েছে। আর এই রাতে কুরআন শরীফ অবতীর্ণের কথা যে বলা হয়েছে তা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রথম যখন পবিত্র কুরআন শরীফ লওহে মাহফূযে অবতীর্ণ করেন সেই রাতটি ছিলো লাইলাতুম মুবারাকা তথা অর্ধ শাবানের রাত্রি অর্থাৎ শবে বরাতের রাত্রি। আর লওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে একই সঙ্গে অবতীর্ণ করা হয়। সেখান থেকে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ তেইশ বৎসরে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে খ- খ-ভাবে তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উপর নাযিল করা হয়।

যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর তাফসীরে খাযিন-এর ৪র্থ খ-ের (সূরা ক্বদরের তাফসীরে) ২৯৫ পৃৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১৩১-১৩৫)

انا انزلناه يعنى القران (فى ليلة القدر وذلك ان الله تعالى انزل القران العظيم جملة واحدة من اللوح المحفوظ الى السماء الدنيا ليلة القدر فوضعه فى بيت العزة ثم نزل به جبريل عليه السلام على النبى صلى الله عليه وسلم نجوما متفرقة فى مدة ثلاث وعشرين سنة فكان ينزل بحسب الوفائع والحاجة اليه.

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি উহা তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ক্বদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। এই বাণী মুবারক-এর দ্বারা ইহা বুঝানো হয়েছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীম একই সঙ্গে লাওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ করেন লাইলাতুল ক্বদরে। অতঃপর ওই পবিত্র কুরআন শরীফ বাইতুল ইযযতে রাখা হয়। সেখান থেকে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে আস্তে আস্তে সুদীর্ঘ তেইশ বছরে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে খ- খ-ভাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উপর অবতীর্ণ করেন।

(সূরা আদ দুখান এর তাফসীরে তাফসীরে খাযিন ৪র্থ খন্ড ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বাগবী ৪র্থ/১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রহুল মায়ানী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, দুররুল মানছুর, ইত্যাদি তাফসীরে সমূহ)

তাছাড়াও সমাধানে আরো উল্লেখ আছে যে, লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতকে আর নির্ধারিত ভাগ্যসমূহ চালুকরণের রাতকে লাইলাতুল ক্বদর তথা শবে ক্বদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৫তম খ-ের ২২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১৩৬)

والثانى اظهار تلك المقادير للملائكة عليهم السلام تكتب فى اللوح المحفوظ وذلك فى ليلة النصف من شعبان والثالث اثبات تلك المقادير فى نسخ وتسليمها الى اربابها من المدبرات

অর্থ: লাইলাতুল ক্বদরের অনেক অর্থ রয়েছে তন্মধ্যে দ্বিতীয় একটি অর্থ হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে যেসব বিষয়ের তালিকা লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে সেসব ভাগ্য তালিকা ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মাধ্যমে যে রাত্রিতে প্রকাশ তথা চালু করা হয় সেই রাতকেই লাইলাতুল ক্বদর তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাত বা মহান মর্যাদাবান রাতও বলে।

তৃতীয়ত: অপর একটি অর্থ হচ্ছে নির্ধারিত ভাগ্যসমূহ যা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তা চালু করার জন্য কার্যকারী ফেরেশতাদের হাতে যে রাতে পেশ করা হয় সেই রাতকে লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর বলে।

এ প্রসঙ্গে ইমামুল মুহাক্বিক্বীন, তাজুল মুফাসসিরীন, ফখরুল উলামা হযরতুল আল্লামা ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব বিখ্যাত হাদীছ শরীফ-এর কিতাব শরহুস সুন্নাহ ২য় খ-ের ৫১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১৩৭)

اخبرنا ابو عثمان الضبى انا ابو محمد الجرحى، نا ابو العباس المحبوبى نا ابو عيسى نا احمد بن منيع حدثنا يزيد بن هارون انا الحجاج بن ارطاة عن يحيى بن ابى كثير عن عروة عن ام المؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فخرجت فاذا هو بالبقيع فقال: اكنت تخافين ان يحيف الله عليك رسوله؟ قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تبارك وتعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب

অর্থ: হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন, হযরত আবু উসমান আদ্বদ্ববীয়্যু। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আবু মুহম্মদ আল জারহী। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আবুল আব্বাস মাহবুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আবু ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আহমদ ইবনে মানীয় রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত ইয়াযীদ ইবনে হারুন রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত হাজ্জাজ ইবনে আরত্বহ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি আবার হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি এক রাত্রে হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমার হুজরা শরীফ-এ না পেয়ে খোঁজার জন্য বের হলাম। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জান্নাতুল বাক্বী-এর মধ্যে দেখতে পেলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন: হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি আশঙ্কা করেছেন যে, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আপনার আমানত খিয়ানত করেছেন? তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি জবাবে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কখনই নয় বরং আমি মনে করেছিলাম আপনি হয়তো অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের বকরীর পশমের সমপরিমাণের চেয়ে অধিক সংখ্যক লোককে ক্ষমা করে দেন। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে উক্ত বিশ্ববিখ্যাত শরহুস সুন্নাহ কিতাবের ২/৫১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১৩৮)

اخبرنا ابو على حسان بن سعد الـمنيعى … عن القاسم بن محمد عن ابيه عن امه عن جده عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ينزل الله جل ثناؤه ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لكل نفس الا انسانا فى قلبه شحناء او مشركا بالله

অর্থ: হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের নিকট হযরত আবু আলী হাসসান ইবনে সা’দ আল মুনীয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত কাসিম ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। তিনি উনার পিতা থেকে। উনার পিতা উনার মাতা থেকে, উনার মাতা উনার দাদা থেকে। উনার দাদা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর ওই শবে বরাতে সমস্ত লোকদেরকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু দু’প্রকারের ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করেন না। যাদের অন্তরে হিংসা রয়েছে তাদেরকে এবং যারা মুশরিক তাদেরকে।

উল্লেখ্য যে, অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতের রাতে ইবাদত বন্দেগী করার ব্যাপারে অসংখ্য বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থে এবং হাদীছ শরীফ-এর কিতাবেও তাক্বীদ রয়েছে এবং তৎপ্রসঙ্গে এটাও উল্লেখ আছে যে, শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক বান্দাদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা ও অসংখ্য গুনাহগার ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। মূলত যারা শয়তান, ইবলিসের দোসর, ইহুদী, নাছারা তারাই কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফকে এবং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হাদীছ শরীফকে অমান্য ও অস্বীকার করে থাকে। অথচ মহান আল্লাহ পাক শবে বরাতে জাগ্রত ব্যক্তিদেরকে এবং ইবাদতকারীকে ক্ষমা করে নিষ্পাপ যিন্দীগী দান করেন। আর ইবলিস শয়তান মুসলমানদের প্রকাশ্য ও বড় শত্রু বিধায় সে চায় মুসলমানরা, মু’মীনেরা যেন ক্ষমা না চায় এবং ক্ষমা না পায়, তারা গুনাহগার হয়ে থাকুক। এই কারণেই ইবলিস শয়তান ও তার অনুসারীরা ফতওয়া দিচ্ছে যে, শবে বরাতে তথা অর্ধ শা’বানের রাতে কোন ইবাদত বন্দেগী করার প্রয়োজন নেই। নাঊযুবিল্লাহ! অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাত বলতে কোন কিছুই নেই। এ কথা বলে মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে এবং হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করার মাধ্যমেই কুফুরী আক্বীদাহ ঢুকাচ্ছে। কেননা আক্বাঈদের কিতাবে উল্লেখ আছে-

(১৩৯)

اهانة السنة كفر

অর্থাৎ সুন্নত তথা হাদীছ শরীফকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা কুফরী। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে-

(১৪০)

لو تركتم سنة نبيكم لضللتم

অর্থাৎ যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আদর্শ তথা সুন্নত পরিত্যাগ কর তাহলে তোমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে।

কাজেই হাদীছ শরীফ-এর আলোকেই পরিষ্কার হয়ে গেল যে, যারা গোমরাহ বা পথ ভ্রষ্ট, তারা হাদীছ শরীফকে গ্রহণ করবেনা, পালন করবেনা তারা চায় সকল মানুষ তাদের মত পথ ভ্রষ্ট হয়ে যাক। সেজন্যই ইবলিস শয়তানের অনুসারী ইহুদী-নাছারারা তাদের কিছু গুপ্তচর মুসলমানদের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে এবং তারা নিজেদেরকে ইসলামের আদর্শ, হাদী, নায়িবে নবী, শাইখুল হাদীছ, শাইখুত তাফসীর, বড় বড় মুফতি ও মুহাদ্দিস, খতীব মাওলানা হিসাবে পরিচয় দিচ্ছে। অথচ তাদের কাজ হচ্ছে ফিরআউনের মত। তাদের আপাদমস্তক পর্যন্ত তাকালে তাদের কাছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার কোনো সুন্নত তথা আদর্শ খুঁজে পাওয়া যায়না। বরং এরাই ইহুদী নাছারাদের ধর্ম প্রচার করছে। যেমন ইসলামের নামে গণতন্ত্র চর্চা করা, মৌলবাদী দাবি করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, ছবি তোলা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, বেগানা নারীর পিছে পিছে চলা ফেরা করা ইত্যাদি হারাম কাজ তারা অহরহ করে যাচ্ছে। তারা মুসলমানদের মহা সংক্রামক ব্যাধি তথা ক্যান্সার। এরা ঈমান আক্বীদা বিধ্বংসী। তাই তারা সর্বদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার শান ও মানের খিলাফ কথা বার্তা বলে থাকে। এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা করতে বলেছেন তা থেকে মানুষকে নিষেধ করে থাকে। যা নিষেধ করেছেন তা করতে বলে। যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের সৃষ্টি। অথচ এ বিষয়ে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ অসংখ্য দলীল রয়েছে। কিন্তু ইহুদী, নাছারাদের অনুসারীরা মাটির মানুষ বলে থাকে। ১. হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি ইলমে গইব সম্পর্কে জানেন না। নাঊযুবিল্লাহ!

২. তিনি সর্বত্র হাযির-নাযির হতে পারেন না। নাঊযুবিল্লাহ! ৩. তিনি হায়াতুন নবী নন। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ এ বিষয়ে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ অসংখ্য দলীল রয়েছে। ৪. উনার শানে ঈদে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ করা যাবে না। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ এ বিষয়ে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ অসংখ্য দলীল রয়েছে।

৫. মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফকে বিদয়াত এবং পহেলা বৈশাখকে নিয়ামত বলে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! ৫. নবী আলাইহিমুস সালাম উনারা ভুল করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! ৬. মাযার শরীফ ও ক্ববর যিয়ারত করা যাবে না। নাঊযুবিল্লাহ! ৭. রমাদ্বান শরীফ-এর তারাবী এত দীর্ঘ সময় ধরে পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। নাঊযুবিল্লাহ! ৮. মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে নামায পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। নাঊযুবিল্লাহ! ৯. তারা মুসলমানদের মাঝে শিরকের গন্ধ প্রবেশ করানোর জন্য তাদের মধ্যে একটি দল খালিক্ব ও মাখলূক্বকে এক করে থাকে। যেমন তারা বলে আল্লাহ পাক তিনি নূর, সেই নূরের অংশ দিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! ১০. শবে ক্বদর মানে না। নাঊযুবিল্লাহ! ১১. শবে মি’রাজ শরীফ মানে না। ১২. আশূরা শরীফ মানে না। ১৩. লাইলাতুর রাগায়িব শরীফ মানে না। ১৪. আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ মানে না। ১৫. বারই রবিউল আউয়ালকে মানে না। ১৬. ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানে না। নাঊযুবিল্লাহ! ১৭. মাযহাব ও মাযহাবের ইমামগণ উনাদেরকে মান্য করেনা। নাঊযুবিল্লাহ! ১৮. শবে বরাতকে তথা অর্ধ শা’বানের রাতকে মানে না। এবং এই রাতে ইবাদত বন্দেগী করেনা পক্ষান্তরে মুসলমানদেরকে করতে বাঁধা দেয় এবং নানান কটুক্তি করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!

অথচ বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর, হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে ইবাদত বন্দেগী করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং এই রাতে বান্দার যাবতীয় ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। অতঃপর বান্দার যাবতীয় ফরিয়াদ ক্ববূল করা হয়ে থাকে। হাদীছ শরীফে রয়েছে পাঁচ রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক বান্দাদের দোয়া ক্ববূল করে থাকেন। তম্মধ্যে অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের রাত অন্যতম। এবং এ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদতে মশগুল থাকার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব বাহরুর রায়িক্ব ২য় খ-ের ৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১৪১-১৪৩)

ما ذكره فى أواخر شرح منية المصلى ومن المندوبات احياء ليالى العشر من رمضان وليلتى العيدين وليالى عشر ذى الحجة وليلة النصف من شعبان كما وردت به الاحاديث وذكرها فى الترغيب والتبرهيب مفصله والمراد باحياء الليل قيامه وظاهره

অর্থ: শরহে মুুনিয়্যাতুল মুছল্লী কিতাবের শেষে উল্লেখ আছে নিম্নোক্ত রাত্রিগুলোতে জাগ্রত থেকে ইবাদত বন্দেগী করা, কান্নকাটি করা মুস্তাহাব সুন্নত। যেমন রমাদ্বান শরীফের প্রথম দশ রাত্রি, দুই ঈদের রাত্রি, যিল হজ্জের দশ রাত্রি এবং অর্ধ শাবানের রাত্রি তথা শবে বরাতের রাত্রি। এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। তারগীব ও তারহীব নামক কিতাবদ্বয়ে এ সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে যে, উক্ত রাত্রিগুলোতে জাগ্রত থেকে ইবাদত বন্দেগী করা। (মিনহাজুল খালিক)

শবে বরাতের নামায কত রাকায়াত কতটি সালামে পড়তে হবে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বাহ এর কিতাব মিনহাতুল খালিক্ব কিতাবে উল্লেখ আছ-

(১৪৪-১৪৮)

وصلاة ليلة النصف من شعبان مائة ركعة بخمسين تسليمه

অর্থ: অর্ধ শা’বানের রাতের নামায তথা শবে বরাতের নামায একশত রাকয়াত। যা ৫০টি সালামে পড়তে হয়। (লামহাতুল আনওয়ার, ত্বহারাতুল ক্বুলুব, কিতাবুন নুর, আল কুওওয়াত, ইহয়াউল উলুমুদ্দীন।)

আরো উল্লেখ আছে যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্ধ শা’বানের তথা শবে বরাতের ফযীলতের কারণেই শা’বান মাসে বেশী বেশী রোযা পালন করতেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত কিতাব মুকাশাফাতুল ক্বুলুব নামক কিতাবের ৩০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১৪৯-১৫০)

وروى عن حضرت ابى امامة الباهلى رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اذا دخل شعبان فظهروا انفسكم واحسنوا نيتكم فيه وعن ام المؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصوم حتى نقول لا يفطر ويفطر حتى نقول لا يصوم وكان اكثر صيامه

وفى النسائى من حديث حضرت اسامة رضى الله تعالى عنه قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لم أرك تصوم من شهر من الشهور ما تصوم من شعبان قال ذلك شهر يغفل الناس عنه بين رجب ورمضان وهو شهر ترفع فيه الاعمال لرب العالمين فأحب ان يرفع عملى وأنا اصوم

অর্থ: হযরত আবু উমামা বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন শা’বান মাস সমাগত হতো তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন এ মাসে তোমরা তোমাদের অন্তরকে পাক পবিত্র করে নাও এবং নিয়তকে বিশুদ্ধ করে নাও। এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দিক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক সময় একাধারে এতো অধিক রোযা রাখতেন আমরা মনে করতাম, তিনি আর রোযা ছেড়ে দিবেন না। আবার কখনও এমন হতো যে একাধারে তিনি রোযাও রাখতেন না, তখন আমরা মনে করতাম তিনি আর রোযা রাখবেন না। তবে উনার অধিকাংশই রোযা হতো শা’বান মাসে।

এ প্রসঙ্গে নাসায়ী শরীফে হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরো বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি একদা আরয করলাম, ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শা’বান মাসে আপনাকে যত অধিক সংখ্যায় রোযা রাখতে দেখি, ততো সংখ্যায় অন্য মাসে রোযা রাখতে দেখি না এর কারণ কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন: এই শা’বান মাস রজব ও রমাদ্বান মাসের মধ্যবর্তী ফযীলতের মাস। অথচ লোকেরা এ শা’বান মাসের ব্যাপারে উদাসীন। মানুষের আ’মলসমূহ এই মাসে তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক-উনার দরবার শরীফে পেশ করা হয়। তাই আমার আমল যখন পেশ করা হয় তখন রোযা অবস্থায় থাকা আমি পছন্দ করি। এর মাধ্যমে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শিক্ষা দিলেন। (নাসাঈ শরীফ)

শুধু তাই নয় এই অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতের রাত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ইবাদত বন্দেগী করে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উক্ত রাত্রিতে ইবাদত করার জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এবং শবে ক্বদর ও শবে বরাতকে ঈদুল মালায়িকা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব বিখ্যাত লিখিত কিতাব “মুকাশাফাতুল কুলুব” ৩০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১৫১-১৫২)

ان للملائكة فى السماء ليلتى عيد … كما ان للمسلمين فى الارض يومى عيد. فعيد الملائكة ليلة البراءة، وهى ليلة النصف من شعبان وليلة القدر فلهذا سميت ليلة النصف من شعبان ليلة عيد الملائكة

وذكر السبكى فى تفسيره أنها تكفر ذنوب السنة وليلة الجمعة تكفر ذنوب الأسبوع وليلة القدر تكفر ذنوب العمر. اى احياء هذه الليالى سبب لتكفير الذنوب وتسمى ليلة التكفير ايضا لذلك وليلة الحياة لما روى المنذرى مرفوعا من احياء ليلة العيد وليلة النصف من شعبان لم يمت قلبه يوم تموت القلوب وتسمى ليلة الشفاعة

لما روى أنه صلى الله عليه وسلم سأل الله تعالى ليلة الثالث عشر الشفاعة فى أمته فأطاه الثلث وسأله ليلة الرابع عشر فأعطاه الثلثين وسأل ليلة الخامس عشر فاعطاه الجميع الامن شرد على الله شراد البعير … وتسمى ليلة المغفرة ايضا. كما روى الامام احمد أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع ليلة النصف من شعبان الى عباده فيغفر لأهل الارض الا رجلين مشرك او مشاجن، وتسمى ليلة العتق

অর্থ: নিশ্চয়ই আকাশে ফেরেশ্তাদের জন্য দু’টি ঈদের রাত রয়েছে। যেমন মুসলমানদের জন্য যমীনে বাৎসরিক বিশেষ দুটি ঈদের দিন রয়েছে। অতএব ফেরেশ্তাদের ঈদের রাত হচ্ছে বরাতের রাত। আর তা হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা ১৫ই শা’বানের রাত। আর ফেরেশ্তাদের জন্য অপর একটি ঈদের রাত হচ্ছে শবে ক্বদর তথা ক্বদরের রাত। আর এই কারণেই অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতকে ঈদুল মালায়িকা অর্থাৎ ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদ বলা হয়।

হযরত ইমাম সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেন, নিশ্চয়ই অর্ধ শা’বানের রাতের তথা শবে বরাতের রাতের ইবাদত এক বৎসরের পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়। আর জুমুয়ার রাতের ইবাদত এক সপ্তাহের পাপসমূহকে মিটিয়ে থাকে। আর ক্বদরের রাতের ইবাদত দ্বারা সমস্ত জীবনের পাপসমূহ মাফ হয়ে থাকে। এ জন্যই শবে বরাতের রাতকে গুণাহ মাফের রাতও বলা হয়। আর ঐ কারণেই শবে বরাতের রাতকে লাইলাতুল হায়াত তথা হায়াত বৃদ্ধির রাত বলা হয়।

ইমাম মুনযিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে মারফু সনদে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি দুই ঈদের দুই রাত্রি এবং অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের রাত্রি জেগে ইবাদত বন্দেগী করবে তার অন্তর সেই কিয়ামতের দিনও মরবেনা, অথচ যেদিনটি অন্তরসমূহের মৃত্যুর দিন হবে। আর এই অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের রাতকে শাফায়াতের রাত্রিও বলা হয়।

হাদীছ শরীফে আছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য শা’বান মাসের ১৩ই তারিখের রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক-উনার দরবারে) সুপারিশ করেছিলেন তাতে কবূল হয়েছিল এক তৃতীয়াংশ উম্মতের সুপারিশ কবুল করেন। অতঃপর ১৪ই শা’বানের রাত্রিতে পুনরায় সুপারিশ করেন, এতেও উম্মতের দুই তৃতীয়াংশকে কবুল করেন। অতঃপর ১৫ই শা’বানের রাত্রিতে তথা শবে বরাতের রাত্রিতেও উম্মতের জন্য সুপারিশ করেন এই রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সকল উম্মতকে কবূল করেন। সুবহানাল্লাহ!

তবে যে সকল বান্দা (আল্লাহ পাক-উনার অবাধ্য হয়েছে) অর্থাৎ উদভ্রান্ত উটের ন্যয় অবাধ্য হয়েছে, তাদের দোয়া কবুল হয় না। আর এ জন্যই এই অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের রাতকে মাগফিরাতের রাতও বলা হয়।

Source: http://www.al-baiyinaat.net

শবে বরাতের প্রকৃত পরিচয়

শবে বরাতের প্রকৃত পরিচয়
- লিখেছেন শান্তি প্রিয় ১৮ জুলাই ২০১১

ড. মুহাঃ নজীবুর রহমান : আরবী শা'বান মাসের মধ্যম রজনীকে ‘শবে বরাত' বা ভাগ্য রজনী বলা হয়। ‘শবে বরাত' মুসলিম সমাজে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। ইসলামে যার প্রকৃত মর্যাদা সম্পর্কে অধিকাংশ মুসলিমই পরিপূর্ণরূপে জ্ঞাত নন, তাই বিভ্রান্তি চলছে অনেক। ২৩ হিঃ সালে হযরত উসমান (রাঃ) ৩য় খলিফা-ই-রাশেদা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এ সময় এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইসলামের প্রসার ঘটে। অগণিত মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে বহু মানুষই সাহাবীগণের সাহচার্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন, ফলে নওমুসলিমগণের অনেকেই ইসলামের শিক্ষায় দক্ষতা প্রাপ্ত হতে পারেননি। তাঁদের অনেকেরই মধ্যে প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা, চরিত্র ও কর্মের পূর্ণ বিকাশ ঘটেনি। তাই নওমুসলিমদের অজ্ঞতা, পূর্ববর্তী ধর্মের প্রভাব, ইসলাম ও আরবদের প্রতি আক্রোশ ইত্যাদির ফলে এদের মধ্যে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ইসলামের অনেক শত্রু সামরিক ময়দানে ইসলামের পরাজয় ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে মিথ্যা ও অপপ্রচারের মাধ্যমে ইসলাম ধ্বংসের চেষ্টা করতে থাকে। আর সবচেয়ে কঠিন ও স্থায়ী মিথ্যা, যে মিথ্যা ওহী বা হাদিসের নামে (জাল হাদিস) প্রচারিত হতে থাকে।
এমনি এক দুশমন ছিল আবদুল্লাহ ইবনু সাবা-ইয়ামানের ইহুদী। হযরত উসমানের (রাঃ) খেলাফতকালে সে মুসলমান নাম ধারণ করে ইসলামের ক্ষতি করার জন্য বিভিন্ন শহরে ও জনপদে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক কথা প্রচার করতে থাকে। হিজাজ, বসরা, কুফা ও সিরিয়ায় তেমন সুবিধা করতে না পেরে সে মিসর গিয়ে জাল হাদিস তৈরি করে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকে। অন্যদিকে হিঃ ৪র্থ-৫ম শতাব্দীতে একদল মানুষ যারা নেককার ও দরবেশ বলে পরিচিতি লাভ করে। তারা তাদের অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির কারণে (সওয়াবের আশায়?) বানোয়াট কথা হাদিসের নামে সমাজে প্রচার করতেন। এদের বাহ্যিক পরহেযগারী, নির্লোভ জীবন যাপন পদ্ধতি দেখে মানুষ সরল মনে এদের কথা বিশ্বাস করে এ সকল বানোয়াট কথা হাদিস বলে গ্রহণ করতো। পরবর্তী সময়ে হাদিসের অভিজ্ঞ ইমামগণ সূক্ষ্ম নিরীক্ষার মাধ্যমে এদের মিথ্যাচার ও জালিয়াতি ধরে ফেলেন এবং তা প্রকাশ করে গ্রন্থ রচনা করেন। বর্তমান প্রবন্ধে আমরা এ বিষয়ে ‘‘শবে বরাতে’’ সংক্রান্ত প্রকৃত অবস্থা ও এর সঠিক মর্যাদা, পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আলোচনা করবো। সাথে সাথে সমাজে প্রচলিত বিভ্রান্তির কারণস্বরূপ এ সংক্রান্ত জাল হাদিসগুলোও কিছু আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ।
প্রথমত: ‘শা'বানের মধ্যম রজনী'র বিশেষ ফযিলত : মধ্য শা'বানের রজনীতে সৃষ্টি জীবের প্রতি বিশেষভাবে আল্লাহর ক্ষমা প্রদানের বিষয়টি সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘ইন্নাল্লাহা লাইত্তালিউ ফিলাইলাতিন নিছফিমিন শা'বানা ফাইয়াগফিরু লিজামিয়ি খলক্বিহি ইল্লালি মুশরিকন আও মুশাহিনিন।’’ - ‘‘আল্লাহতায়ালা মধ্য শা'বানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং ‘শির্ককারী' ও বিদ্বেষ-হিংসা পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।’’ এই অর্থের হাদিস কাছাকাছি শব্দে ৮ জন সাহাবী আবু বকর সিদ্দিক, আয়েশা, আবু হুরায়রা, আবু মূসা আশ'আরী, মুয়ায ইবন জাবাল, আবদুল্লাহ ইবন আমর, আউফ ইবন মালিক ও আবু সা'লাবা আল-খুশানী (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) থেকে বর্ণিত হয়েছে। (ইবন মাযাহ, আস-সুনান ১/৪৪৫, বায্যার, আল-মুসনাদ ১/১৫৭, ২০৭, ৭/১৮৬; আহমদ ইবন হাম্বল, আল-মুসনাদ ২/১৭৬; ইবন আবি আসিম, আস-সুন্নাহ, পৃঃ ২২৩-২২৪; ইবন হিববান, আস-সহীহ ১২/৪৮১; তাবরানী, আল-মু'জাম আল-কাবীর ২০/১০৮, ২২/২২৩; আল-মু'জাম আল-আওসাত, ৭/৬৮; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, ৩/৩৮১; ইবন খুযায়মা, কিতাবুত তাওহীদ ১/৩২৫-৩২৬)। এ সকল হাদিসের মধ্যে কিছু সনদ দুর্বল ও কিছু সনদ ‘হাসান' পর্যায়ের। সামগ্রিক বিচারে হাদিসটি সহীহ। আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) বলেন, হাদিসটি সহীহ যে মূল কথা অনেক সাহাবী থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে, যা পরস্পর একে অপরকে শক্তিশালী হতে সহায়তা করে।... (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সাহীহাহ ৩/১৩৫)।
অত্র হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, শা'বান মাসের মধ্যম রজনীটি একটি ফযিলতপূর্ণ বরকতময় মাগফেরাতের রাত্রি। এই রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে (যারা-মুশরিক নন, অংশীবাদী নন, জীবনে সকল ধরনের শির্কমুক্ত এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত জীবনযাপন করেন) ক্ষমা করে দেন। কিন্তু এই ক্ষমা অর্জনের জন্য শির্ক ও বিদ্বেষ বর্জন ব্যতীত অন্য কোন ইবাদত-বন্দেগীর প্রয়োজন আছে কিনা তা অত্র হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি।
দ্বিতীয়ত ঃ ‘‘লাইলাতুম্মুবারাকাহ’’ আয়াতের তাফসীর : পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘‘ইন্না আনযালনাহু ফিলাইলাতিম মুবারাকাতিন, ইন্না কুন্না মুনযিরিন।’’ (সূরা : ৪৪ দুখান, আয়াত-৩)। ‘‘আমি তো তা (আল-কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এক মোবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী।’’
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় শুধুমাত্র তাবিয়ী ‘ইকরিমাহ' বলেন, এখানে ‘মোবারক রজনী' বলতে ‘মধ্য শা'বানের রাত্রিকে বুঝানো হয়েছে। ইকরিমাহ আরও বলেন, অত্র রাতে গোটা বছরের সকল বিষয়ে ফায়সালা করা হয়। (তাবারী, তাফসীর ২৫/১০৭-১০৯)।
কিন্তু প্রখ্যাত মুফাসসিরগণ ইকরিমার উল্লেখিত ব্যাখ্যায় প্রদত্ত মত গ্রহণ করেননি। ইমাম তাবারী বিভিন্ন সনদে ইকরিমার উল্লেখিত ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করার পর তার প্রতিবাদ করে বলেছেন যে, ইকরিমার এই মত ভিত্তিহীন। তিনি বলেন যে, সঠিক মত হলো এখানে ‘মোবারক রজনী' বলতে ‘লাইলাতুল কদরকে বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ যে রজনীতে কুরআন কারীম অবতীর্ণ করেছেন সেই রাত্রিকে একস্থানে লাইলাতুল কাদর বা ‘মহিমান্বিত রজনী' বলে অবহিত করেছেন (সূরা : ৯৭ ক্বাদর, আয়াত-১)। অন্যত্র এই রাত্রিকেই ‘লাইলাতুম্মুবারাকা' বা ‘বরকতময় রজনী' বলে অভিহিত করেছেন এবং এই রাত্রিটি নিঃসন্দেহে রামাদান মাসের মধ্যে; কারণ অন্যত্র আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, ‘‘তিনি রামাদান মাসে কুরআন নাযিল করেছেন।’’ (সূরা : ১ বাকারা, আয়াত-১৮৫)। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মোবারক রজনী রামাদান মাসে, শা'বান মাসে নয়। (তাবারী, তাফসীর-২৫/১০৭-১০৯)।
পরবর্তী মুফাসসিরগণ ইমাম তাবারীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করে বলেছেন যে, ‘লাইলাতুল ক্বাদর' ও ‘লাইলাতুম্মুবারাকা' একই রাতের দুটি উপাধি। দুটি কারণে মুফাসসিরগণ ইকরিমার তাফসীরকে বাতিল বা অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন :
১. ইকরিমার এই মতটি পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট বাণীর সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ, কুরআন কারীমে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ রামাদান মাসে কুরআন নাযিল করেছেন। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে যে, একটি মোবারক রাত্রিতে ও একটি মহিমান্বিত রাত্রিতে তিনি কুরআন নাযিল করেছেন। এ সকল আয়াতের সমন্বিত স্পষ্ট অর্থ হলো, আল্লাহ রামাদান মাসের একরাতে কুরআন নাযিল করেছেন এবং সেই রাত্রিটি বরকতময় ও মহিমান্বিত। মোবারক রজনীর ব্যাখ্যায় মধ্য শা'বানের রজনীর উল্লেখ করার অর্থ হলো উল্লেখিত আয়াতগুলোর স্পষ্ট অর্থের ভুল ব্যাখ্যা।
২. বিভিন্ন সাহাবী ও তাবেয়ী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁরা ‘মোবারক রজনী'র ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এই রাত্রিটি হলো ‘লাইলাতুল ক্বাদর' বা মহিমান্বিত রজনী। সাহাবীগণের মধ্য থেকে ইবন আববাস (রাঃ) ও ইবন উমার (রাঃ) থেকে এ ধরনের ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে। তাবেয়ীগণের মধ্য থেকে আবু আবদুর রহমান আল-সুলামী (৭৪ হিঃ), মুজাহিদ বিন জাবর (১০২ হিঃ), হাসান বসরী (১১০ হিঃ) কাতাদা ইবন দি'আমা (১১৭ হিঃ) ও আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম মাদানী (১৮২ হিঃ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁরা সকলেই ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘লাইলাতুম্মুবারাকাহ অর্থ হলো ‘লাইলাতুল ক্বাদর।' (নাহ্হাস মা'আনিল কুরআন ৬/৩৯৫; যামাখশারী, আল-কাশশাফ ৩/৪২৯; ইবনুল ১আরাবী, আহকামুল কুরআন ৪/১৬৯০; ইবনু আতিয়্যাহ, আল-মুহাররার আল-ওয়াজীয ৫/৬৮-৬৯; কুরতরী, তাফসীর/১৬/১২৬; আবু হাইয়্যান, আল-বাহর আল-মুহীত ৮/৩২-৩৩; ইবন কাছীর, তাফসীর ৪/১৪০; সূয়ূতী, আদ-দুররুল মানছুর ৫/৭৩৮-৭৪২; শাওকানী, ফাতহুল কাদীর ৪/৫৭০-৫৭২; আলুসী, রুহুল মা'আনী ১৩/১১০; থানবী, তাফসীল-ই আশরাফী ৫/৬১৫-৬১৬; সাবুনী মুহাম্মদ আলী, সাফওয়াতুত তাফাসীর ৩/১৭০-১৭১; মুফতী শফী, মা'আরেফ আল-কুরআন ৭/৮৩৫-৮৩৬; ও আবুল ‘আলা, মওদূদী, তাফহীমুল কুরআন ১৪/১৩৯)।
য মধ্য শা'বানের রাত্রে ভাগ্য লিখন : ‘‘কিছু কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই রাত্রিতে ভাগ্য অনুলিপি করা হয়, পরবর্তী বছরের জন্য হায়াত, মউত ও রিযক ইত্যাদির অনুলিপি করা হয়। উক্ত হাদীসগুলোর সনদ বিস্তারিত নিরীক্ষার পর দেখা যায় যে, এই অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলো অত্যন্ত দুর্বল অথবা বানোয়াট। এই অর্থে কোন সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয়নি।’’ (ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, হাদীসের নামে জালিয়াতি, পৃ-৪১৪)।
য শবে বরাতে নির্ধারিত রাক'আত ও পদ্ধতির সালাত আদায় সংক্রান্ত ফযীলতের হাদীস : শবে বরাত উপলক্ষে কিছু বর্ণনায় এ রাত্রিতে বিশেষ পদ্ধতিতে বিশেষ সূরা পাঠের মাধ্যমে, নির্দিষ্ট সংখ্যক রাক'আত সালাত আদায়ের বিশেষ ফযীলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মত পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী এই অর্থে বর্ণিত যাবতীয় হাদীস বানোয়াট ও জাল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। হিজরী ৪র্থ শতকের পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে বানিয়ে এগুলো প্রচার করা হয়েছে। এখানে এ জাতীয় কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো :
১. ৩০০ রাক'আত সংক্রান্ত জাল-হাদীস : বর্ণিত আছে যে, ‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শা'বানের রাতে প্রত্যেক রাক'আতে ৩০ বার সূরা ইখলাস পাঠের মাধ্যমে ৩০০ রাক'আত সালাত আদায় করবে, জাহান্নামের আগুন অবধারিত এমন ১০ ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’’ হাদীসটি আল্লামা ইবনুর ক্বায়্যিম বাতিল বা ভিত্তিহীন হাদীসসমূহের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। (ইবনুল ক্বাইয়্যিম, নাক্বদুল মানকুল ০১/৮৫)।
২. ১০০ রাক'আত সংক্রান্ত জাল-হাদীস : মধ্য শা'বানের রজনীতে ১০০ রাক'আত সালাত আদায়ের প্রচলন হিজরী ৪র্থ শতকের পরে মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিগণ উল্লেখ করেছেন যে, ৪৪৮ হি. সনে বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রথম ইহার প্রচলন শুরু হয়। (মোল্লা'আলী ক্বারী মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৩/৩৮৮)। এ সময়ে বিভিন্ন মিথ্যাবাদী-গল্পকার, ওয়ায়েয এই অর্থে কিছু জাল হাদীস তৈরি করে প্রচার করে। এই অর্থে বেশ কিছু জাল হাদীস বর্ণিত হয়েছে যার প্রত্যেকটিই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হওয়ার দলিল বিদ্যমান, তার মধ্য থেকে একটি বর্ণনা এখানে উল্লেখ করছি। এ বিষয়ে হযরত আলী ইবন আবি তালিব (রা.)-এর নামে প্রচারিত; ‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শা'বানের রাতে ১০০ রাক'আত সালাত আদায় করবে, প্রত্যেক রাক'আতে সূরা ফাতিহা ও ১০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে সে উক্ত রাতে যত প্রয়োজনের কথা বলবে আল্লাহ তা'আলা তার সকল প্রয়োজন পূরণ করবেন। লাওহে মাহফুযে তাকে দুর্ভাগা লিপিবদ্ধ করা হলেও তা পরিবর্তন করে সৌভাগ্যবান হিসেবে তার নিয়তি নির্ধারণ করা হবে। আল্লাহ তা'আলা তার কাছে ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তার পাপরাশি মুছে দিবে, বছরের শেষ পর্যন্ত তাকে সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন রাখবেন, এছাড়াও আল্লাহ তা'আলা ‘আদন' জান্নাতে ৭০ হাজার বা ৭ লাখ ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা বেহেশতের মধ্যে তার জন্য নহর ও প্রাসাদ নির্মাণ করবে এবং তার জন্য বৃক্ষরাজি রোপণ করবে...। যে ব্যক্তি এ নামায আদায় করবে এবং পরকালের শান্তি কামনা করবে আল্লাহ তা'আলা তার জন্য তার অংশ প্রদান করবেন। হাদীসটি সর্বসম্মতভাবে বানোয়াট ও জাল হিসেবে প্রমাণিত। এর বর্ণনাকারীগণ কেউ অজ্ঞাত পরিচয় এবং কেউ মিথ্যাবাদী জালিয়াত হিসেবে পরিচিত। (ইবনুল জাওযী, আল-মাওদূ'আত ০২/৪৯-৫০; সূয়ুতী আল-লাআলী, ০২/৫৭-৫৮; ইবন ইরাক, তানযীহ, ০২/৯২-৯৩; মোল্লা ক্বারী, আল-আসরার, পৃ-৩৩০৩৩১; আল-মাসনু', পৃ-২০৮-২০৯; শাওকানী, আল ফাওয়ায়েদ ০১/৭৫-৭৬)।
৩. ৫০ রাক'আত আদায়ের ফযীলত সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম যাহাবী একে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট হাদীস হিসেবে হাদীসটির বর্ণনাকারী অজ্ঞাত রাবী মুহাম্মদ বিন সাঈদ আলমীলী আত-তাবারীর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। উক্ত মুহাম্মদ বিন সাঈদ এ হাদীসটি তার মতই অজ্ঞাত রাবী মুহাম্মদ বিন আমর আল-বাজালী এর সনদে হযরত আনাস রা. থেকে মরফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (যাহাবী, মীযানুল ই'তিদাল, ০৬/১৬৮-১৬৯)।
৪. মধ্য শা'বানের রজনীতে ১৪ রাক'আত সালাত আদায়ের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসটি উল্লেখ করে ইমাম বায়হাক্বী বলেন, ‘‘ইমাম আহমদ বলেছেন যে, এই হাদীসটি আপত্তিকর, পরিত্যক্ত, জাল ও বানোয়াট বলে প্রমাণিত। কেননা হাদীসটির সনদে অজ্ঞাত পরিচয় বর্ণনাকারীগণ রয়েছে।’’ (বায়হাক্বী, শু'আব আল-ঈমান, ০৩/৩৮৬-৩৮৭, হাদীস নং-৩৮৪১)।
৫. উক্ত রাত্রে ১২ রাক'আত সালাত আদায়ের ফযীলত সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীসটি জালিয়াতকারীগণ হযরত আবু হুরায়রা রা. পর্যন্ত একটি জাল সনদ তৈরি করে তাঁর সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে প্রচার করেছে। উক্ত হাদীসটির সনদের অধিকাংশ বর্ণনাকারীই অজ্ঞাত। পরিচিত বর্ণনাকারীগণ দুর্বল ও পরিত্যাজ্য। (ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ'আত, ০২/৫২; সুয়ূতী, আল-লাআলী ০২/৫৯)।
উপরের আলোচনার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়েছে যে, মধ্য শা'বানের রাত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সূরার মাধ্যমে নির্দিষ্ট রাক'আত সালাত আদায় সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীসসমূহ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারী মুহাদ্দিসগণ এব্যাপারে সকলেই একমত। মোল্লা আলী ক্বারী (১০১৪ হি) মধ্য শা'বানের রাত্রে সালাত আদায়ের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলোর অসারতা উল্লেখপূর্বক বলেন, এ সালাত ৪র্থ হিজরী শতকের পর ইসলামের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে, যার উৎপত্তি হয়েছে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে। এব্যাপারে অসংখ্য জাল-হাদীস তৈরি করা হয়েছে, যার একটিও সঠিক বা নির্ভরযোগ্য নয়। (মোল্লা ‘আলী ক্বারী, আল-আসরার, পৃ-৩৩০-৩৩১; ইবনুল ক্বাইয়্যেম, আল-মানার আল-মুনীফ, পৃ-৮৯-৯৯)।
য মধ্য শা'বানের রাতে কিয়াম ও দিনে সিয়াম সংক্রান্ত হাদীস : ইমাম ইবন মাজহ তাঁর সুনান গ্রন্থে উল্লেখিত বিষয়ে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, ‘‘আলী (রা.) বলেন, যখন মধ্য শা'বানের রাত আসে তখন তোমরা রাতে (সালাতে-দোয়ায়) দন্ডায়মান থাকো এবং দিবসে সিয়াম পালন করো। কারণ ঐদিন সূর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, ‘কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। কোনো রিযক অনুসন্ধানকারী আছো কি? আমি তাকে রিযক প্রদান করবো। কোনো দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তাকে মুক্ত করবো।' এভাবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে।’’
অত্র হাদীসটি ইমাম ইবন মাজাহ কর্তৃক সংকলিত হওয়ার কারণে হাদীসটি আমাদের সমাজে বহুল পরিচিত, প্রচারিত ও আলোচিত। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে বানোয়াট বলে চিহ্নিত করেছেন। এ হাদীসটি একমাত্র ইবন আবি সাবরাহ ছাড়া অন্যকেউ বর্ণনা করেননি। শুধুমাত্র ইবন আবি সাবরাহ দাবি করেছেন যে, তিনি ইবরাহীম বিন মোহাম্মদ থেকে, হাদীসটি শ্রবণ করেছেন।
ইবন আবি সাবরাহ (১৬২ হি.)-এর পূর্ণ নাম আবু বকর বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আবি সাবরাহ। তিনি মদীনায় বসবাস করতেন। কিন্তু তুলনামূলক নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে হাদীসের ইমামগণ নিশ্চিত হয়েছেন যে, তিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নিতেন। অসংখ্য ইমাম তাকে মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। তন্মধ্যে, ইমাম বুখারী, ইমাম আহমদ, ইয়াইয়া বিন মাঈন, আলী ইবনুল মাদীনী, ইবনু আদী, ইবন্ হিববান ও হাকিম নাইসাপুরী অন্যতম। (ইবন্ হাজার আস-কালানী, তাকবীর পৃ- ৬২৩; তাহযীব, ১২/২৫-২৬)।
এই আলোকে আল্লামা শিহাবউদ্দিন আহমদ বিন আবি বকর আল-বুসীরী (৮৪০ হি.) অত্র হাদীস এর টিকায় বলেছেন, ইবন্ আবি সাবরাহ এর দুর্বলতার কারণে উক্ত সনদটি দুর্বল। ইমাম আহমদ ও ইবন্ মাঈন তাকে হাদীস বানোয়াটকারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। (আল-বুসীরী, যাওয়ায়েদ ইবন্ মাজাহ পৃ-২০৩)।

শাইখ নাসির উদ্দিন আলবানী, (ইবন্ আবি সাবরাহ) সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি অত্যন্ত দুর্বল ও তার হাদীস বানোয়াট। তিনি আরও বলেছেন যে, অত্র হাদীসটি বানোয়াট। (আলবানী, দাঈফু সুনানি ইবন্ মাজাহ, পৃ-১০৬; যাঈফাহ, ৫/১৫৪)।
য দুই ঈদ ও মধ্য শা'বানের রাতভর ইবাদত : এ সংক্রান্ত একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে : ‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শা'বানের রাত ও দুই ঈদের রাত ইবাদতে জাগ্রত থাকবে তার অন্তরের মৃত্যু হবে না। যেদিন সকল অন্তর মরে যাবে।’’
অত্র হাদীসটির একমাত্র বর্ণনাকারী ‘ঈসা ইবন্ ইবরাহীম ইবন্ তাহমান' বাতিল হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে পরিচিত। ঈমাম বুখারী, নাসায়ী, ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আবু হাতিম রাযি ও অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস একবাক্যে তাকে পরিত্যক্ত বা মিথ্যাবাদী বর্ণনাকারী বলে উল্লেখ করেছেন, এছাড়া ঈসা ইবন্ ইবরাহীম নামক এই ব্যক্তি তার উস্তায হিসেবে যার নাম উল্লেখ করেছেন ‘মারওয়ান বিন সালিম' মিথ্যা হাদীস বর্ণনায় অভিযোগে অভিযুক্ত। (ইবন্ যাওযী, আল-ইলাল আল-মুতানাহিয়া ০২/৫৬২; ইবন হাজার, আল-ইসাবা ফী তাময়ীযীস সাহাবা ০৫/৫৮০; তালখীস আল-হাবীব, ০২/৬০৬)।
এভাবে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘‘যে ব্যক্তি পাঁচ রাত (ইবাদতে) জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য হবে, ‘‘যিলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখের রাত্রি, ৯ তারিখের (‘আরাফা) রাত্রি, ১০ তারিখের (ঈদুল আযহার) রাত্রি, ঈদুল ফেতরের রাত্রি ও মধ্য শা'বানের রাত্রি।’’ হাদীসটির বর্ণনাকারী আব্দুর রহীম ইবন্ যাইদ আল-‘আম্মী (১৮৪ হিঃ) নামক ব্যক্তি মিথ্যা ও জাল হাদীস বর্ণনাকারী বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন। ইমাম বুখারী, নাসাঈ, ইয়াহইয়া ইবন্ মাইন, আহমদ ইবন্ হাম্মল, আবু হাতিম রাযী, আবু দাউদ ও অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস এই ব্যক্তির জালিয়াতির বিষয় উল্লেখ করেছেন। এজন্য অত্র হাদীসটি মাওযূ বা জাল হাদীস বলে গণ্য। ইবনুল জাওযী, ইবন্ হাজার ‘আসকালানী, মুহম্মদ নাসিরউদ্দিন আলবানী প্রমুখ মুহাদ্দিস এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। (আল-মুনযিরী, আত-তারগীব ০২/৯৬; যাহাবী, মীযানুল ই'তিদাল ০৪/৩৩৬; আলবানী, যায়ীফাহ ০২/১২)।
য শবে বরাতের গোসল : শবে বরাত বিষয়ক প্রচলিত কথাগুলোর অন্যতম হলো ‘এই রাত্রে গোসল করার ফযীলত।' বিষয়টি যদিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবুও আমাদের সমাজে তা বহুল প্রচলিত। আমাদের দেশের প্রচলিত অনেক পুস্তকেই এই জাল হাদীসটি লেখা হয় এবং ওয়াযে আলোচনা করা হয়। ‘মাওলানা গোলাম রহমান' রচিত মকছুদোল মো'মেনীন, পৃ-২৪০; মুফতী হাবীব ছামদানী রচিত বার চান্দের ফযীলত, পৃ-২৬; অধ্যাপিকা কামরুনেসা দুলাল রচিত পুস্তক পৃ- ২৪০; মুফতী হাবীব ছামদানী রচিত বার চান্দের ফযীলত, পৃ-২৬; অধ্যাপিকা কামরুন্নেসা দুলাল রচিত পুস্তক পৃ-৩০৯-এর অত্র হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘‘একটি হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি উক্ত রাত্রিতে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় গোসল করবে, সেই ব্যক্তির গোসলের প্রত্যেকটি বিন্দু পানির পরিবর্তে তাহার আমলনামায় ৭০০ রাকাত নামাযের ছওয়াব লিখা যাইবে। গোসল করিয়া দুই রাকাত তাইয়্যাতুল অজুর নামায পড়িবে।...’
সূত্র এখানে

Friday, July 15, 2011

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত - ১


কিছু দিন আগে আমি পবিত্র শবে বরাত - সর্ম্পকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম । সেই পোস্টে বাকরুদ্ব, ম জ বাসার, আলোর দিশারী, ফালতু-খান, আই কবির ইত্যাদি নিকের ব্লগাররা বলেছিল পবিত্র শবে বরাত বলতে কিছু নেই এবং আমাকে রেফারেন্স দিতে বলেছিল । সেই কারণেই এই ব্লগটি লেখা ।


অনেকে বলে থাকে কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে ‘শবে বরাত’ নামে কোন শব্দের নেই । প্রশ্ন হচ্ছে কেন নেই ?

‘ছলাত’ শব্দটি আরবী। যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত পাঁচবার পড়া প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (শর্ত সাপেক্ষে) ফরয। ‘ছলাত’ শব্দটিকে ফারসী ভাষায় বলা হয় ‘নামায।’ উর্দূতেও নামায বা ‘বন্দিগী।’ বাংলায় ‘প্রার্থনা।’ ইংরেজিতে Prayer । আরো অন্যান্য ভাষাভাষীর লোকেরা অন্যান্য ভাষায় ‘ছলাত’ শব্দকে বুঝিয়ে থাকে যার মূল ভাব, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।
অনুরূপভাবে ‘রোযা’ শব্দটি ফারসী। আরবীতে বলা হয় ‘ছিয়াম।’ ইংরেজীতে বলে Fasting । বাংলায় আমরা বলে থাকি অভূক্ত থাকা, পানাহার ও গুনাহ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।যার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। কিন্তু' বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহার হলেও সকল ভাষার মূল বিষয় হচ্ছে ‘ছিয়াম।’
তদ্রূপ ‘শবে বরাত’ ফারসী ভাষায় ব্যবহার হয় যার বাংলায় অর্থ হচ্ছে ভাগ্যরজনী বা মুক্তির রাত। কুরআন শরীফে শবে বরাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ শব্দের দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে এবং বিশ্ববিখ্যাত হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ শব্দের দ্বারা বুঝানো হয়েছে যা সর্বজনমান্য তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাবসমূহে উল্লেখ হয়েছে।

পাক ভারত উপমহাদেশে উক্ত বরকতময রজনী ‘শবে বরাত’ হিসেবে প্রাধান্য লাভ করার কারণ:

আরবী ও ফারসী ভাষার দেশ থেকে অসংখ্য আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইসলামের মর্মবাণী এদেশের মানুষদের মাঝে প্রচার করে তাদেরকে কালিমা শরীফ পড়িয়ে মুসলমান বানিয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। বিশেষ করে ফারসী ভাষাভাষী আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য। উনাদের কারণে ফারসী ভাষাগুলো আমাদের কাছে ক্রিয়া করে প্রাধান্য লাভ করেছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে ‘শবে বরাত।’
উল্লেখ্য, এক ভাষায় অপর ভাষার শব্দের মিশ্রণ মূলত একটি অনিবার্য ঐতিহ্য। প্রায় সব ভাষায়ই এর নিদর্শন রয়েছে। আমাদের বাংলা ভাষায়ও এর নিদর্শন অনেক। এবং এটি প্রায় সব ভাষারই প্রকৃতি।

কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই ‘শবে বরাত’ প্রমাণিত

শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে বরকত পূর্ণ রাত হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)
উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা অনুসরনীয় মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন ।
বিশ্ববিখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন-
অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান তথা অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)কে বুঝানো হয়েছে। এবং উহার নামে নামকরণ করা হয়েছে যেমন লাইলাতুর রহমত তথা রহমতের রাত, লাইলাতুল মুবারাকাতু তথা বরকতের রাত। লাইলাতুছ ছেক ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণের রাত তথা ভাগ্য রজনী।”
আর বরকতপূর্ণ রাত দ্বারা শবে বরাত তথা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ বহন করে তার পরবর্তী আয়াত শরীফের يفرق (বণ্টন করা হয়।) শব্দ দ্বারা। কেননা তাফসীর জগতের সকল তাফসীরে সমস্ত মুফাসসীরীনে কিরাম উনারা يفرق শব্দের তাফসীর করেন يكتب (লেখা হয়) يفصل (ফায়ছালা করা হয়) يتجوز (বণ্টন বা নির্ধারণ করা হয়) يبرم (বাজেট করা হয়) “فيصله‘ (নির্দেশনা দেয়া হয় বা ফায়ছালা করা হয়) ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর, তাফসীরে মাযহারী এর ৮ম খন্ডের ৩৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
“প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (সূরা আদ দুখানের ৩ নম্বর আয়াত শরীফ) ليلة مباركة হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের রাত। এ রাত্রে সারা বৎসরের কাজ কর্মের ফায়ছালা করা হয় এবং কতজন জীবিত থাকবে ও কতজন মারা যাবে তারও ফায়ছালা করা হয়। অতঃপর এ ফায়ছালার থেকে কোন কিছু বেশি করা হয় না এবং কোন কমতিও করা হয় না। অর্থাৎ কোন প্রকারের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয় না। হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে মাইসারা ইবনে আখফাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, শা’বান মাসে পরবর্তী শা’বান মাস পর্যন্ত মৃত্যুর ফায়ছালা করে দেয়া হয়। এমনকি লোকেরা যে বিবাহ করবে, সেই বৎসর তার থেকে কত জন সন্তান জন্মগ্রহন করবে তার তালিকা এবং তার মৃত্যুর তালিকাও প্রস্তুত করা হয় ওই বৎসরে অর্ধ শাবানের রাতে তথা শবে বরাতে।
আবুদ্বহা এর বর্ণনায় এসেছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, শা’বানের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৫ই শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে আল্লাহ পাক সমস্ত কিছুই ফায়ছালা করেন, আর রমাদ্বানের ক্বদর রাতে (শবে ক্বদরে) সেই ফায়ছালার তালিকা (কপি) বাস্তবায়ন করার জন্য বাস্তবায়নকারীদের কাছে অর্পণ করা হয়। (চলবে)
Source:http://www.somewhereinblog.net/blog/nihan13/29208185