Wednesday, September 14, 2011

লাইলাতুল কদর

পবিত্র মাহে রমজানের ২৬তম দিবাবসানের মধ্য দিয়া বিশ্বমুসলিমের জীবনে অশেষ রহমত ও কল্যাণের বারতা নিয়া আসে লাইলাতুল কদর। আজ শনিবার মাগরিবের পর হইতে রাতভর ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে বিশ্বাসীগণ পালন করিবেন লাইলাতুল কদর।

” আমি এটি (কুর’আন) নাযিল করেছি এক মর্যাদাপুর্ণ রাতে,
তুমি কি জানো সেই মর্যাদাপুর্ণ রাতটি কি?
মর্যাদাপুর্ণ এ রাতটি হাজার মাসের থেকেও উত্তম,
এতে ফেরেশতা ও রুহ তাদের মালিকের সব ধরণের আদেশ নিয়ে অবতরণ করে
(সে আদেশ বার্তাটি চিরন্তন প্রশান্তি), তা ঊষার আর্বিভাব পর্যন্ত (অব্যাহত) থাকে “

: আল কোরআন; সুরা ক্বাদর আয়াত নং:১-৫

সমস্ত প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি তার শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মতকে উপহার দিয়েছেন অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ মাস রমযানুল মোবারক। এ মাসেই আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। রমযান মাসে সিয়াম সাধনায় মহান আল্লাহর অনন্ত অসীম রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। তাই তো রমযানের আগমনে আল্লাহ প্রেমিক বান্দার অন্তরে এক অনাবিল আনন্দধারা প্রবাহিত হয়। সকল ঈমানদারেরা শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে এই পবিত্র মাসটি অতিবাহিত করে। মুসলিম উম্মাহর জন্য রমযান অত্যন্ত কাঙ্খিত ও প্রাপ্তির মাস। এ মোবারক মাসে রাব্বুল আলামীন লাইলাতুল কদর নামে এমন এক মহামূল্যবান ও মহিমান্বিত রজনী আমাদের দান করেছেন, যা ইতিপূর্বে কোন উম্মাতকে দেয়া হয়নি। লাইলাতুল কদর এমন একটি রজনী যা হাজার মাস (ইবাদত) অপেক্ষা উত্তম।

মহান আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন : (১) হা-মীম, (২) শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, (৩) আমি তো এটা (কুরআনুল কারীমকে) অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে; আমি তো সতর্ককারী। (৪) এ রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়; (৫) আমার আদেশক্রমে, আমি তো রাসূল প্রেরণ করে থাকি। (সূরা: দুখান)
ব্যাখ্যা : মুবারক রজনী দ্বারা মুফাস্সিরগণ লাইলাতুল কদরকে বুঝিয়েছেন।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি কদরের রাতে পূর্ণ বিশ্বাস ও সওয়াবের নিয়্যাতে ইবাদত করবে তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারী)

হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রমযান মাসের আগমনে রাসূল (সাঃ) বললেন : দেখ এ মাসটি তোমাদের কাছে এসে উপস্থিত হয়েছে। এতে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাস থেকে অধিক উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে যাবতীয় কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। আর চিরবঞ্চিত ব্যক্তিই কেবল এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাযাহ)

আইশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন : রমযানের শেষ ১০ দিন শুরু হলে রাসূল (সাঃ) লাইলাতুল কদর লাভ করার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতেন। নিজে রাত জাগতেন এবং নিজের পরিবারের লোকজনকেও জাগাতেন। (বুখারী ও মুসলিম)

রাসূল (সাঃ) বলেছেন : শবে কদরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) ফেরেশতাদের বিরাট বাহিনী নিয়ে অবতীর্ণ হন এবং যারা এই রাতে ইবাদত করে তাদের জন্য রহমতের দু’আ করতে থাকেন। (বায়হাকী)

অন্যত্র হাদীসে হযরত আইশা সিদ্দীকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি জানতে পারি কোন রাতটি কদরের রাত, তাহলে এ রজনীতে কোন দু’আ পড়ব ? জবাবে তিনি বললেন : তুমি বলবে, ”আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউয়ুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী ” (হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করা পছন্দ করো, অতএব আমাকে ক্ষমা করো। (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ)

মহিমান্বিত রজনীর নিদর্শনসমূহ :
১. কদরের রাত্রি তিমিরাচ্ছন্ন হবে না। ২. নাতিশীতোষ্ণ হবে, না গরম না শীত এমন হবে। ৩. মৃদু বায়ু প্রবাহিত হবে। ৪. উক্ত রাতে মু’মিনগণ কিয়ামুল লাইল বা ইবাদত করে অন্যান্য রাত অপেক্ষা অধিক তৃপ্তি বোধ করবে। ৫. হয়তোবা আল্লাহ তা’আলা কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে উহা স্বপ্নে দেখাবেন। (ইবনে খুযায়মা, ইবনে হিব্বান, মুসনাদে আহমদ) ৬. ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে। (বুখারী) ৭. সকালে হালকা আলোক রশ্নিসহ সূর্যোদয় হবে, পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়। (মুসলিম)

লাইলাতুল কদর বা কদরের রাতে আমাদের কি কি করণীয় ? :
কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ রাতে আমাদের করণীয় হলো ;
(১) মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রত্যেক অভিভাবক নিজে রাত জাগবেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগরণে উদ্বুদ্ধ করবেন।
(২) সাধ্যানুপাতে তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ নামায লম্বা কিরাআত ও লম্বা রুকু সিজদা দ্বারা দীর্ঘক্ষণ যাবৎ আদায় করবেন। সিজদায় তিন বা ততোধিক বার সিজদার তাসবীহ পাঠ করে কুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত দু’আসমূহ পাঠ করবেন। এ মর্মে বিশুদ্ধ হাদীসও রয়েছে। অনেকে আবার খুব পেরেশান থাকেন যে, কদরের নামাযের নিয়্যাত কি হবে ? কোন্ কোন্ সূরা দিয়ে নামায পড়তে হবে ? আমাদের ভালভাবে জানা থাকা প্রয়োজন যে, ইশার নামাযের পর থেকে নিয়ে ফযর পর্যন্ত যে নফল নামায পড়া হয়, তাকে বলা হয় কিয়ামুল-লাইল বা তাহাজ্জুদ। অতএব কদরের রাতে ইশার পর থেকে ফযর পর্যন্ত যত নামায পড়া হবে সে গুলোকে নফলও বলা যাবে অথবা তাহাজ্জুদও বলা যাবে। লাইলাতুল কদর উপলক্ষে নামাযের জন্য বিশেষ কোন নিয়্যাত নেই বা অমুক-অমুক সূরা দিয়ে পড়তে হবে এমনও কোন বাধাধরা নিয়ম নেই।
(৩) অতীতের কবীরা গুনাহ বা বড় পাপের জন্য একনিষ্ঠভাবে তাওবা করবেন ও অধিকরূপে ইস্তেগফার করবেন।
(৪) কুরআন মাজীদ পাঠ করবেন। শরীয়াত সম্মত পদ্ধতিতে তথা চুপিসারে, একাকী, রিয়ামুক্ত অবস্থায় যিকির-আযকার করবেন।
(৫) পাপ মোচনসহ পার্থিব ও পরকালীন সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণের জন্যে বিনয়ী ভাবে একাগ্রচিত্তে দু’আ কবুলের প্রত্যাশা নিয়ে দু’আ করবেন। নিম্নের দু’আ বিশেষভাবে পাঠ করবেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউয়ুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী ” – নিঃসন্দেহে ঐ বরকতপূর্ণ রাতটি যে ব্যক্তি অবহেলায় বা অলসতায় অবমূল্যায়ন করল, এর যথার্থ গুরুত্বারোপ করল না সে সমূহকল্যাণ থেকে নিজকে বিরত রাখল।
(৬) প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, ঐ রাতের যথাযথভাবে হক আদায় করে মহান আল্লাহর পক্ষথেকে কল্যাণ, ফযীলত, বরকত ও আশাতীত সওয়াব লাভে ধন্য হওয়া।

মাহে রমযান রহমত,বরকত এবং নাজাতের যে অমীয় পয়গাম নিয়ে এসেছিল, সেই পূর্ণময়তা আমরা কি লাভ করিতে পেরেছি ? ইচ্ছা আর অনিচ্ছায় অসংখ্য ভূল হয়ে গেছে আমাদের। তাই মহান প্রভুর দরবারে আরো একবার প্রার্থনা করি, সমস্ত ভুলত্রুটি ক্ষমা চোখে দেখে আমাদের নামায ,রোযা, সেহরী, ইফতারী , দান-খরয়াত, সদকায়ে ফেতর সহ অন্যান্য ইবাদত বন্দেগী গুলো মন্জুর করো। তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না করো, কেহ করবে মোদের ক্ষমা।কারণ তুমিই আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা । আমরা তোমারই সাহায্যপ্রার্থনা করি।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে বেশী-বেশী করে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে লাইলাতুল কদরের ফযীলত অর্জন করে তার নৈকট্য লাভের তাওফীক দান করুন।

Source: http://imti24.wordpress.com/

No comments:

Post a Comment