রমযানের শেষ দশক হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির
॥ এম. মুহাম্মদ আবদুল গাফফার॥
বছর ঘুরে আমাদের সামনে আবারো মাহে রমযান উপস্থিত। এ মাসটি দু’টি কারণে গৌরবময় হয়ে রয়েছে। একটি হলো মুসলিম জাতির চির ঐতিহ্য সিয়াম সাধনার মহাব্রত নিয়ে উপস্থিত হয় মুসলমানদের দ্বারে। এ মর্মে মহান রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন ইয়া আইয়্যূহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিকুম লা আল্লাকুম তাত্তাকুন- অর্থাৎ হে বিশ্বাসীগণ শোন! তোমাদের ওপর সিয়ামকে অবধারিত (ফরয) করা হয়েছে যেমনটি করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর (এ জন্য যে) সম্ভবত তোমরা তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারবে (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং-১৮৩)। উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সিয়াম বা রোজাকে মানব সৃষ্টির পর থেকেই তাদের ওপর করণীয় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। দিন ও কালের ভিন্নতা একেক সময় একেক রকম অবশ্যই ছিল। যেমন রমযান মাসের রোজা ফরয হবার আগে মহরমের রোজা কোনো কোনো নবীর উম্মতগণ পালন করতেন। বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (আ.) প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম পালন করতেন। যাকে বর্তমানে আইয়্যামে বেজের রোজা বলা হয়ে থাকে। মাহে রমযানের সিয়াম বা রোজা ফরয হবার পর ঐ সমস্ত রোজা নফল হিসেবে গণ্য হয়েছে।
সিয়াম বা রোজাব্রতের পালনীয় বিষয় হলো দীর্ঘ একমাস প্রতিদিন সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যৌন সম্ভোগ নিষিদ্ধ ও রাত্রে আরাম আয়েশ উপভোগকে সীমিত রাখা। মূলত এ সমস্ত বিষয় মানুষের জন্য অবৈধ কিছু নয়। কিন্তু এগুলো যখন সমাজে মাত্রারিক্তভাবে চালু হয় এবং বৈধতার সীমা ছড়িয়ে যায় তখনই কেবল সমাজে নানারূপ বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, খুনাখুনিসহ সব রকম অশান্তির সৃষ্টি হয়।
সৃষ্টির আদি থেকে মানব সমাজে যে তিনটি বিষয়, বিপর্যয় সংঘটনের জন্য দায়ী তাহলো উদরপূর্তি বা ভোগ বিলাস, নারী সম্ভোগ ও অতি আরাম লাভের আশায় উচ্চাভিলাষী মনোবৃত্তি পোষণ। লাগামহীনভাবে যদি এগুলো চরিতার্থ করার মানসিকতা গড়ে ওঠে তাহলে অন্যের অধিকারকে খর্ব করার প্রশ্ন চলে আসে আর এ ক্ষেত্রে মানুষ ন্যায়নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা ও দায়িত্ববোধের গণ্ডি থেকে বেড়িয়ে এসে এহেন অপকর্ম নেই যা করতে সে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে সমাজে মারামারি, হানাহানি, যুদ্ধবিগ্রহ, হত্যা, সন্ত্রাস, অশ্লীলতা ও সব রকম অন্যায় তথা অপকর্মের তাণ্ডবে শান্তিময় মাটির পৃথিবী অসহনীয় অগ্নিগর্ভে রূপান্তরিত হয়। সহজ কথায় বলা যায়, মানবতা বিবর্জিত এমন একটি অসভ্য সমাজ কাঠামো তৈরি হয় যা পশু সমাজের চেয়েও জঘন্যতম। পবিত্র কুরআনুল কারীমের ভাষায় যাকে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ইনহুম ইল্লা কালআনআম বালহুম আদাল্লু সাবিলা। অর্থাৎ নিশ্চয়ই ওরা হলো জন্তু জানোয়ার বরং তার চেয়েও গোমরাহ বা ভ্রান্তপথ অনুসারী। এ সমস্ত মানবতা বিধ্বংসী পঙ্কিলতার করালগ্রাস থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রয়োজন আল্লাহভীতি তথা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার হুকুমের নিঃশর্ত তাবেদারী। রমযানের সিয়াম সাধনা মানুষকে মহান রাব্বুল আলামীনের দেয়া আইনের মধ্য থেকে জীবনের যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্নের শিক্ষা দান করে থাকে। মাহে রমযানে যে রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে দিবাভাগে যাবতীয় হালাল পানাহার যৌনবৃত্তি তথা কামনা বাসনা চরিতার্থ থেকে বিরত এবং রাত্রিতে দেহমনের তৃপ্তি মেটানোর মত নিদ্রা থেকে দূরে থাকতে হয় সেই আল্লাহ সুবহানাহু তায়লার নির্দেশেই যাবতীয় অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার, আল্লাহদ্রোহী কার্যক্রম ও অন্যের অধিকার হরণ থেকে বিরত থাকাটাই হলো সিয়াম সাধনার মূল প্রশিক্ষণ। এছাড়া নিছক পানাহার থেকে বিরত থেকে কষ্ট করার মধ্যে খুব বেশি সফলতা নেই। এ মর্মে মহানগরী (সা.)’র একটি হাদিস এভাবে বর্ণিত হয়েছে- মানলাম ইয়াদিউ কাওলাজযুর ওয়াল আমালবিহী লাইসালিল্লাহি হাজাতুন ফি আই ইয়াদয়া তা’য়ামাহু ওয়া শারাবাহু অর্থাৎ (রোজা রেখে) কেউ যদি মিথ্যা কথা বলা ও তদনুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষের লাগামহীন অন্যায় কামনা বাসনা দমন করে নিজের যাবতীয় ইচ্ছা ও কার্যক্রমকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পন্ন করাই হলো সিয়ামসহ সকল ইবাদতের আসল লক্ষ্য। এছাড়া নিজের খেয়ালখুশী ও প্রচলিত চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী পরিচালনা তথা সম্পন্ন করা আল্লাহ সবুহানাহু তায়ালার বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বৈ কিছু নয়। এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন তারাইতা মানাত্তাখাজা ইলাহাহু হাওয়াহু আকাআনতা তাকুনু আলাইহি ওয়াকিলা অর্থাৎ (হে রাসূল) তুমি কি কখনো চিন্তা করেছো যারা নিজের মনের বাসনা লালসাকে আপন ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে এরূপ ব্যক্তিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব তুমি কিভাবে নিতে পার (আল কুরআন)। পবিত্র কুরআন হাদিসের দৃষ্টিতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য ও একমাত্র সংবিধান হিসেবে মেনে নিয়ে মানব সমাজে তা বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণই হলো রমযান মাসের আসল শিক্ষা। এ জন্যই রমযানের সিয়াম সাধনাকারীর প্রকৃত সম্পর্ক অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি সিয়াম পালনকারী তা সরাসরি আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে কুদসীতে বর্ণনা করা হয়েছে, মহান রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন আসসাওমূলী ওয়া আনা আজিজিবিহি অর্থাৎ রোজা আমার জন্যই আর আমি এর পুরস্কার দান করবো (সহীহ আল বুখারী)। এ থেকে বোঝা যায় যে, বিশ্ব প্রভু মানব জাতিকে যে খিলাফাতের দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার যথার্থ প্রশিক্ষণ রমযানুল মুবারকের সিয়াম সাধনায় নিহিত রয়েছে। রমযানুল মুবারক দ্বিতীয় যে কারণটির জন্য গৌরবের অধিকারী তাহলো এ মাসেই সর্বশেষ আসমানী কিতাব পবিত্র কুরআনুল কারীম নাযিল হয়েছিল। আর এই অবিকৃত তথা অসাধারণ গ্রন্থখানা হলো বিশ্বজাহান পরিচালনার একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত আইন বা জীবন বিধান। এ মর্মে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ঘোষণা করেন শাহরু রামাদানাল্লাজি উনযিলা ফি হিল কুরআন, হুদাললিন্নাসি ও বাইয়্যেনাতি মিনাল হুদা ওয়াল ফুরক্বান ..... অর্থাৎ এ রমযান মাসে পবিত্র কুরআনুল কারীমকে অবতীর্ণ করা হয়েছে যা মানুষের জন্য পথনির্দেশক এবং উজ্জ্বল হিদায়েত ও সত্য এবং মিথ্যার পার্থক্যকারী (আল কুরআন সূরা আল বাকারা)। পবিত্র কুরআনুল কারীম নাযিল হবার পর বিশ্বে যে বিপ্লব শুরু হয় তা ছিল বিশ্ব সভ্যতার এক অতুলনীয় মাইলফলক। বিশ্বের শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্ঞান চর্চা, দর্শন, আধ্যাত্মিকতা, সামাজিকতা, বিচারব্যবস্থা, নৈতিকতা ও প্রশাসনের সার্বিক দিকসমূহের যে আমূল পরিবর্তন হয় তার নজির কোথাও নেই।
মহানবী (সা.)র হাদিস থেকে জানা যায় যে, রমযানুল মুবারকের তিনটি দশককে তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে বিভূষিত করা হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, আউয়ালুহু রাহমাতুন ওয়া আওসাতুহু মাগফেরাতুন ওয়া আখেরুহু ইত্কুন মিনান্নারি অর্থাৎ রমযানের প্রথম (দশক) রহমতের দ্বিতীয় (দশক) মাগফিরাতির ও তৃতীয় বা শেষ (দশক) হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির। রমযানুল মুবারকের তৃতীয় বা শেষ দশকটা অত্যন্ত তাৎপর্যময় রমযানুল মুবারকের এ শেষ দশকেই লাইলাতুল ক্বদর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যে রাত্রি সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ঘোষণা করেন লাইলাতুল ক্বাদরে খায়রুম মিন আলফি শাহর অর্থাৎ লাইলাতুল ক্বদরের রজনী হাজার মাসের রাত্রির চেয়েও উত্তম (আল কুরআন, সূরা ক্বদর)। উক্ত রজনীর ফাযায়েল সম্পর্কে হাদিস গ্রন্থসমূহে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। যেমন এ মর্মে মহানবী (সা.) বলেন, আন আবিহুরায় রাতা (রা.) ক্বয়ালা ক্বূয়ালা মান ক্বমা লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমানাও ওয়া ইহতেছাবাও গুফিরালাহু মা তাকাদ্দামা মিন জান্বিহী অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে খোদা (সা.) ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরের রজনীতে ঈমান ও ইহতেছাবের সাথে দণ্ডায়মান অর্থাৎ ইবাদতে মশগুল থাকবে তার অতীত জীবনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ আল বুখারী)। এই লাইলাতুল ক্বদরের এত মর্যাদা এ কারণেই যে এ রাত্রে মহান রাব্বুল আলামীন বিশ্ব পরিচালনার জন্য তার অলঙ্ঘনীয় সংবিধান মহাগ্রন্থ আল কুরআন রমযান মাসে এ রাত্রেই অবতীর্ণের ধারাবাহিকতা শুরু হয়। এ মর্মে মহান রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন ওয়াল কিতাবিল মুবীন। ইন্না আনযালনাহু ফি লাইলাতিম মুবারা কাতিন ইন্না কুন্না মুনযিরীন অর্থাৎ শপথ এই সুস্পষ্ট প্রকাশকারী কিতাবের, আমি উহাকে এক বড় কল্যাণময় ও গুরুত্বপূর্ণ রাতে নাযিল করেছি কেননা আমি মানুষকে ভয় বা সাবধান করবার ইচ্ছা করেছিলাম (সূরা দুখান, আয়াত নং-২ ও ৩)। অনেকের মতে পবিত্র কুরআনুল কারীম ক্বদরের রজনীতে লাওহু মাইফজ থেকে একযোগে প্রথম আসমানে নাযিল হয়। যা হোক লাইলাতুল ক্বদরের বরকতময় রাত্রে যে কুরআনুল কারীমের অংশবিশেষ রাসূল (সা.)র ওপর ওয়াহী আকারে নাযিল শুরু হয় তা সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আল কুরআনের অপরিসীম গুরুত্বের কারণেই মূলত লাইলাতুল ক্বদরের এত মর্যাদা।
রমযানুল মুবারকের শেষ দশকেই যে, হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল ক্বদরের উপস্থিতি এ কথা হাদিস গ্রন্থের নির্ভরযোগ্য বর্ণনাসমূহ থেকে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) আয়েশা (রা.) ইবনে ওমর (রা.), আবু হুরায়রা (রা.) ও আবু সাঈদ (রা.)সহ বহু সংখ্যক বর্ণনাকারীর নিকট থেকে সিহাহ সিত্তার হাদীিস সম্ভারে বর্ণনা উৎকলিত রয়েছে। যেমন আন আয়েশাতা (রা.) আন্না রাসূলুল্লাহ (সা.) ক্বয়ালা তাহাররাও লাইলাতাল ক্বাদরে ফিল বিতরে মিনাল আশরিল আওয়াখিরি মিন রামাদান অর্থাৎ আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা লাইলাতুল ক্বদরকে রমযানের শেষ দশদিনের বেজোড় রজনীতে তালাশ কর (সহীহ আবু বুখারী)।
অন্য হাদিস, এভাবে এসেছে আন ইবনে আব্বাস (রা.) আন্নাননাবী (সা.) ক্বয়ালা ইতামিসুহলা ফিল আশরিল আওয়াখিরি ফি রামাদানা লাইলাতুল ক্বাদরে ফি তাসিয়াতিন তাব্কী ফি সাবিয়াতি তুবকা ফি খামিছাতি তাব্কা অর্থাৎ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন তোমরা লাইলাতুল ক্বদরকে রমযানের শেষ দশ রজনীতে খোঁজ কর। লাইলাতুল ক্বদর এসব রাত্রিতে আছে- যখন রমযানের ৯, ৭, ৫, রাত বাকি থাকে (সহীত আল বুখারী)। এভাবে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে আরো বর্ণনা এভাবে রয়েছে ক্বয়ালা রাসূলুল্লাহ (সা.) হিয়া ফিল আশরিল আওয়াখিরি ফি তিছয়ী ইয়াবক্বিনা আওফিতিছয়ী ইয়াক্বিনা ইয়ানী লাইলাতুল ক্বাদরে (অর্থাৎ রাসূল (সা.) বলেছেন, লাইলাতুল ক্বদর শেষ দশ রাত্রে আছে। যখন নয় রাত অতীত হয়ে যায় কিংবা সাত রাত বাকি থাকে অর্থাৎ ২৯ ও ২৭ তারিখে) এ সমস্ত বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, লাইলাতুল ক্বদর মাহে রমযানের শেষ দশকের যে কোনো বিজোড় রাতে রয়েছে। ঐ মহাবরকতময় রাত্রিকে সুনির্দিষ্ট করে না দেয়ার যে কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে তাহলো অতিপ্রিয় বিষয় অর্জন করার জন্য আনুগত্যশীল বান্দাগণ যেন অতি আন্তরিকতার সাথে শ্রম সাধনায় আত্মনিয়োগ করে এবং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে খুশী করার জন্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে তার বন্দেগি তথা ধ্যান খেয়ালে মগ্ন হয়ে পড়ে। রমযানুল মুবারকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ইবাদত হলো শেষ দশকে ই’তেকাফ করা। মানুষকে একদিন পৃথিবীর যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও মোহ ত্যাগ করে ক্ববরে তথা আল্লাহর সন্নিধ্যে উপনীত হতে হবে। সেখানে মানুষের নেক আমল ভিন্ন অন্য কিছুই সঙ্গী হবে না। মানুষকে চিরদিনের জন্য যে রাব্বুল আলামীনের নিকট চলে যেতে হবে পার্থিব জীবনেও কিছুদিনের জন্য হলেও চলমান জীবনের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা ত্যাগ করে আল্লাহর ঘরে অবস্থান করে তাকে সর্বান্তকরণে আপন করে নিয়ে তাঁরই স্মরণ ও তাসবিহ এবং সালাতের মাধ্যমে অতিবাহিত করার গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। মূলত মসজিদে শেষ দশকের এ ই’তেক্বাফ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের মাধ্যম হিসেবে লাইলাতুল ক্বদরকে অর্জন করা। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.)র বহুসংখ্যক হাদিস বিখ্যাত সাহাবী (রা.)গণের নিকট থেকে বর্ণিত আছে। যেমন আন আয়েশাতা (রা.) আন্নানাবী (সা.) কানা ইয়াতাকিফুল আশরুল আওয়াখিরুমিন রামাদানা হাত্তা তাওফ্ফাহুল্লাহু ... অর্থাৎ নবী পতœী আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) রমযানের শেষ দশদিনে ই’তেকাফে বসতেন। এমনকি এভাবেই তাকে আল্লাহ উঠিয়ে নিলেন এভাবে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে একটি দীর্ঘ হাদিসের অংশবিশেষ উল্লেখ করা যেতে পারে- ক্বয়ালা মান কানা ই’তেকাফ মিয়ীয়া ফালইয়াতিকিফাল উয়াশারাল আওয়াখিরা অক্বাদ উরিয়িতু হাজিহীল লাইলাতা অর্থাৎ মহানবী (সা.) বলেন যে, আমার সাথে (মধ্য রমযানে) ই’তেকাফ করেছে সে যেন শেষ দশদিনে ই’তেকাফ করে, কেননা, এই ক্বদরের রাত আমাকে দেখানো হয়েছে, (সহীহ আল বুখারী)। এসব বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, লাইলাতুল ক্বদরের পুণ্যময় রজনীর ফায়দা হাসিলের জন্যও ই’তেকাফ অন্যতম উদ্দেশ্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের এই অতুলনীয় বরকতময় রজনীর সওয়াব অর্জনসহ রমযানুল মুবারকের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। আমীন।
Source: /www.weeklysonarbangla.net
No comments:
Post a Comment