Monday, September 12, 2011

রমযানের শেষ দশ দিন

রমযানের শেষ দশ দিন

রমযানের শেষ দশ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত রাসূলুল্লাহ সা. এই দশ দিনে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন বস্তুজগতের মায়ামোহের বাঁধন ছিঁড়ে তাকওয়ামুখী হৃদয় অর্জন ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মুখ্য সময় হল মাহে রমযান আর রমযানের শেষ দশ দিন হল তাকওয়া ও আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের শেষ সুযোগ সে হিসেবে বর্ণনাতীত শ্রম দিতে হয় এই দিনগুলোতে

হাদীসে এসেছে: উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, ‘রমযান মাসের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি ইবাদত করেছেন যা অন্য সময় করেননি” (মুসলিম)

তিনি আরো বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে কোরআন তিলাওয়াত, নামায, যিক্র ও দোয়ার মাধ্যমে রাতযাপন করতেন তারপর সেহরী খেতেন

আয়েশা (রা) থেকে আরেকটি হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের শেষ দশকে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন খুব পরিশ্রম করতেন এমনকি লুঙ্গি বেঁধে নিতেন” (বুখারী ও মুসলিম)

রমযানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সা. তেকাফ করতেন এবং এ ইতেকাফের জন্য মসজিদের নির্জন স্থান বেছে নিয়ে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করতেন শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও, অন্যসব কাজকর্ম পেছনে ফেলে একনিষ্ঠ হয়ে রমযানের শেষ দশ দিন মসজিদে কাটাতেন

তেকাফ

একাগ্রচিত্তে আল্লাহ তাআলার ইবাদতের উদ্দেশে সুনির্ধারিত পন্থায় মসজিদে অবস্থান করাকে তেকাফ বলে

তেকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত নিয়মিত ইতেকাফ করেছেন পরবর্তীতে তাঁর সাহাবীগণ এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন সে হিসেবে রমযানের শেষ দশকে ইতেকাফ করা সুন্নাত

তেকাফের উপকারিতা

* তেকাফের মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়

* অহেতুক কথা, কাজ ও কুপ্রবৃত্তি থেকে সংযত থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে

* তেকাফ অবস্থায় লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করা সহজ হয়

* তেকাফের মাধ্যমে মসজিদের সাথে সম্পর্ক তাজা হয় ও মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে ওঠে

* তেকাফকারী দুনিয়াবী ব্যস্ততা থেকে দূরে অবস্থান করে ইবদাত বন্দেগীর মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছুতে সক্ষম হয়

* বদ অভ্যাস ও কুপ্রবৃত্তি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়ে ইতেকাফের মাধ্যমে চারিত্রিক বলিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব হয়

তেকাফে প্রবেশ

রমযানের শেষ দশকে ইতেকাফকারীর জন্য , বিশ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্বেই ইতেকাফস্থলে প্রবেশ করা উত্তম কেননা ইতেকাফের মূল লক্ষ্য লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধান, যা শেষ দশকের বে-জোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি আর একুশতম রাত এরই অন্তর্ভুক্ত তবে ফজরের নামাযান্তেও ইতিকাফে প্রবেশ করা যেতে পারে এ মর্মে আয়শা (রাঃ) থেকে একটি হাদীস বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে

তেকাফ থেকে বের হওয়া

ঈদের রাতে সূর্যাস্তের পর ইতিকাফ থেকে বেরিয়ে পড়া বৈধ তবে সালাফদের কারও কারও মতে ঈদের রাত মসজিদে অবস্থান করে মসজিদ থেকেই ঈদের জামাতে অংশ গ্রহণ করা উত্তম

তেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া না হওয়া প্রসঙ্গ

* বিনা ওযরে ইতেকাফকারী যদি মসজিদ থেকে বের হয়ে যায় তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে তার ইতেকাফ বাতিল বলে গণ্য হবে আর যদি শরীরের অংশ বিশেষ বের করে দেয়, তাহলে কোনো অসুবিধা হবে না নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও ইতেকাফ অবস্থায় নিজ মাথা বের করে দিতেন মা আয়েশা (রা) নিজ কক্ষে বসেই রাসূলুল্লাহর মাথা ধুয়ে সিঁথি করে দিতেন

অতি প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন, অযু, গোসল, পানাহার, প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদি কাজের জন্যে সর্বসম্মতিক্রমে বের হওয়া জায়েয আর যদি উল্লিখিত বিষয়সমূহ মসজিদের ভিতরে থেকেই সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয় তাহলে মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ হবে না

তেকাফ যদি এমন মসজিদে হয়, যেখানে জুমার নামায হয় না, তাহলে জুমার নামাজের জন্য জামে মসজিদে গমন করা ওয়াজিব

* ওয়াজিব নয় এমন ইবাদত যেমন জানাযায় অংশ গ্রহণ, অসুস্থকে দেখতে যাওয়া ইত্যাদির উদ্দেশ্যে বের হওয়া জায়েয নেই

তেকাফকারীর ইবাদত

সব ধরনের ইবাদতই ইতেকাফকারীর জন্য অনুমোদিত যেমন ঃ নামায, কুরআন তিলাওয়াত, যিক্র, দোয়া,ইসতেগফার, সালামের উত্তর দেয়া, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ, ফতোওয়া প্রদান, ইলম শিক্ষা ইত্যাদি

তেকাফকারীর জন্য পর্দা টাঙ্গিয়ে লোকজন থেকে নিজকে আড়াল করে নেয়া মুস্তাহাব কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতেকাফ করেছেন একটি তুর্কি তাঁবুতে যার প্রবেশ দ্বারে ছিল একটি পাটি

(সহীহ মুসলিম)

তেকাফকারী প্রয়োজনীয় বিছানা-পত্র, কাপড় ইত্যাদি সাথে নিয়ে নিবে, যাতে মসজিদ থেকে বেশি বের হতে না হয়

তেকাফকারীর জন্য মসজিদের ভেতরে পানাহার, ঘুমানো, গোসল, সাজগোজ, সুগন্ধী ব্যবহার, পরিবার-পরিজনের সাথে কথপোকথন ইত্যাদি সবই বৈধ তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সীমাতিরিক্ত না হয়ে যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইতেকাফস্থলে তাঁর পত্নিগণের সাক্ষাত ও কথপোকথন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত

যেসব কাজ থেকে ইতেকাফকারী বিরত থাকবে

* অতিরিক্ত কথা ও ঘুম, অহেতুক কাজে সময় নষ্ট করা, মানুষের সাথে বেশি বেশি মেলা-মেশা ইত্যাদি ইতেকাফের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যহত করে তাই এ সব থেকে ইতিকাফকারী বিরত থাকবে

* ইতিকাফ অবস্থায় ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নয় কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন

(সহীহ মুসলিম)

কামভাবসহ স্বামী-স্ত্রীর আলিঙ্গন ইতিকাফে থাকাকালীন কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত নয়, তা বরং সর্বসম্মতিক্রমে হারাম

* বায়ূ নি:সরণ মসজিদের আদবের পরিপন্থী তাই পারতপক্ষে একাজ থেকে বিরত থাকা উচিত

লাইলাতুল ক্বদর

সম্মানিত রজনী লায়লাতুল ক্বদর পবিত্র কুরআনে লাইলাতুল ক্বদরকে বরকতময় রজনী বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে লাওহে মাহফুয থেকে প্রথম আকাশের বায়তুল মামুরে সম্পূর্ণ কুরআন নাযিল হয় এ সম্মানিত রাতে এ রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম এ রাতে ফেরেশতা এবং জিব্রাইল আমীন অবতীর্ণ হন শান্তির আবহ ঘিরে রাখে প্রতিটি বিষয়কে লায়লাতুল ক্বদরে এই রজনীতে স্থিরীকৃত হয় প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় মাগফিরাতের রজনী লায়লাতুল ক্বদর হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছোয়াবের আশায় লায়লাতুল ক্বদর ইবাদতের মাধ্যমে যাপন করে তার অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়

লায়লাতুল ক্বদরে শয়তান বের হয় না রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন,এ রজনীতে শয়তানের বের হওয়ার অনুমতি নেই

লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করা

রমযানের শেষ দশ দিনেলাইলাতুল ক্বদরতালাশ করা মুস্তাহাব তবে তা বে-জোড় রজনীতে হওয়া প্রায় নিশ্চিত

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরালাইলাতুল ক্বদরতালাশ করো রমযানের শেষ দশকের বে-জোড় রজনীগুলোতেতিনি আরো বলেন, “তোমরা রমযানের শেষ দশকেলাইলাতুল ক্বদরতালাশ করোসে হিসেবে রমযানের ২১,২৩,২৫,২৭ ও ২৯ তারিখেলাইলাতুল ক্বদরহওয়ার সম্ভাবনা আছে লাইলাতুল ক্বদর পাওয়ার উত্তম পদ্ধতি হল রমযানের শেষ দশ দিন ই'তেকাফে কাটানো এবং শেষ দশকের প্রতিটি রাত ইবাদতের মাধ্যমে যাপন করালাইলাতুল ক্বদরে আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত দোয়া আল্লাহুম্মা ইন্নাকাআফুউন কারীমুন তুহিব্বুলআফওয়া ফাফুআন্নী [হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ কর, সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করো]

http://sorolpath.com

No comments:

Post a Comment