Sunday, September 11, 2011

হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রজনী

হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রজনী
লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান, রাত ০৮: ৩০, ১০ জুলাই, ২০১১

পবিত্র লাইলাতুল ক্বাদ্‌র এবং শা'বান মাসের মধ্য রজনী (কথিত লাইলাতুল বরাত) নিয়ে অনেক মুসলমান ভাই বোনদের মধ্যে কনফিউশান আছে। অনেকেই জানেননা পবিত্র কুরআন এবং হাদীসে 'লাইলাতুল বরাত' নামের কোন রজনী আছে কি না। পক্ষান্তরে পবিত্র কুরআন ঘোষিত 'লাইলাতুল ক্বাদর'কেও অনেকে গতানুগতিক রাত্রি মনে করে অবহেলা করে থাকেন।
মহাগ্রন্থ আল্‌ কুরআনের ৯৭ নং সূরার নাম হচ্ছে - সূরা আল্‌ ক্বাদ্‌র। পাঁচটি আয়াত সম্বলিত এই সূরাটির বাংলা অনুবাদ নিম্নরুপ :- (১) নিশ্চয়ই আমি একে (পবিত্র কুরআনকে) নাযিল করেছি ক্বদরের রাতে। (২)আপনি কি জানেন, ক্বদরের রাত কি? (৩) ক্বদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। (৪) এই রাত্রিতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। (৫) এটা নিরাপত্তা যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
পবিত্র হাদীস শরীফে মাহে রমজানের শেষ ১০ দিনের যেকোন বোজোড় যথা ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তম রজনীতে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র তালাশ করার কথা বলা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামদের (রাঃ) কেউ কেউ খাছ করে ২৭ তম রজনীকে লাইলাতুল ক্বদ্‌র বলেছেন। সুতরাং আমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত সমূহ তালাশ করলে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র পেতে পারি।
বাংলাদেশে তথা পাক-ভারত উপ মহাদেশের মুসলমানদের চরম দুর্ভাগ্য হচ্ছে - এ অঞ্চলের অধিকাংশ মুসলমান আল্লাহ ও রাসূল সা: এর নির্দেশের চেয়ে বিভিন্ন রসম রেওয়াজ ও পীর-বুজর্গের বাণীকেই অগ্রাধীকার দিয়ে থাকেন বেশী। অনেক উদাহরণের দিকে না গিয়ে শুধু মাত্র লাইলাতুল বরাত এবং লাইলাতুল ক্বাদ্‌রের পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি আমাদের নিকট স্পষ্ট হবে আশা করি।
মহাগ্রন্থ আল্‌ কুরআন ও হাদীস শরীফের কোথাও ‘লাইলাতুল বরাত’ নামে কোন রজনীর উল্লেখ নেই। অথচ আমাদের দেশে আবিস্কৃত! লাইলাতুল বরাতে ইবাদাতের নামে নানা পদের উপাদেয় খাওয়া দাওয়া, হালুয়া রুটি বিলানো, ফাতেয়া দেয়া, সৌভাগ্যের আশায় ঘর এবং কবর সমূহে মোমবাতি জ্বালানো ইত্যাদি করা হয় এই অন্ধ বিশ্বাসে যে, এ রাতে যে ভাবে খাওয়া দাওয়া চলবে, বছরের সব দিনগুলি নাকি সে ভাবেই চলবে। মসজিদে মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, জামায়াতের সাথে লাইলাতুল বরাতের নামাজ, ইবাদাতের নামে মাজারে মাজারে ধর্ণা দেয়া, মসজিদ এবং মাজারে নানা রকমের লাইটিং ডেকোরেশন ইত্যাদি ইত্যাদিতে এক মহা আয়োজন।
এর বিপরীতে ‘পবিত্র লাইলাতুল ক্বাদর’ এর অবস্থা দেখুন, যে লাইলাতুল ক্বদরের উপর মহাগ্রন্থ আল কুরআনে একটি সূরা নাযেল হয়েছে, হাদীস শরীফে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে। সেই লাইলাতুল ক্বদর পালন করা হয় খুবই ঢিলে-ঢালা ভাবে। গুটি কয় আল্লাহর বান্দা ইবাদাতে থাকলেও লাইলাতুল বরাত নামের প্রোগ্রামে যারা মসজিদ মাতিয়ে রাখতেন তারা ঈদের কেনা কাটায় মার্কেটে ভিড় করেন অধিক হারে। কি জানি রমজানে ঈদের মার্কেটিং করার জন্য ক্বদরের বিকল্প হিসাবে রমজানের পূর্বেই বরাত বানানো হয়েছে কি না।
সূরাটির তৃতীয় আয়াতে বলা হয়েছে - “লাইলাতুল ক্বাদরি খাইরুম্‌মিন আলফে শাহার” অর্থাৎ ক্বদর বা ভাগ্য রজনী হাজার মাসেরে চেয়েও উত্তম। এখানে হাজার মাস মানে গুনে ৮৩ বছর ৪মাস নয়, মর্যাদার অধিক্য বুঝানোর জন্য হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে।
লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা এত বেশী কেন, তা ‍সূরার প্রথম আয়াতেই বলা হয়েছে - “ইন্না আনযাল্‌না হু ফী লাইলাতিল ক্বাদর” - ‘আমি এ (কুরআন) নাযিল করেছি ক্বদরের রাতে।’ সূরা দুখানে একে মুবারক রাত বলা হয়েছে। বলা হয়েছে : “ইন্না আনযালনা-হু ফী লাইলাতিল মুবারাকা” ‘অবশ্যি আমি একে একটি বরকতপূর্ণ রাতে নাযিল করেছি।’
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, মানব জাতির ইহ ও পরকালীন মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল্‌ কুরআন নাযিলের কারণে ক্বাদরের রাতটিকে সম্মানিত এবং বরকতময় করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সাথে যথাযত সম্পর্ক গড়তে পারলে মহান আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা মানব জাতির জীবনও বরকতময় করে দেবেন এবং ইহ ও পরকালীন জীবনে সম্মানিত করবেন।
এই মুবারক রাতে ইবাদতের ফযীলত অনেক বেশী। ওলামায়ে কেরামদের কেউ কেউ এই এক রাতের ইবাদাতকে ১০০০ মাসের ইবাদাতের সমান মর্যাদা সম্পন্ন বলে থাকেন। হ্যঁ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দার আন্তরীকতার বিচারে এর চেয়েও বেশী ছওয়াব দান করতে পারেন। এখানে অতি সুক্ষ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা না বললে নয়। তা হলো - প্রতিটি নফল ইবাদাতের ছওয়াব কিন্তু বোনাস সমতুল্য। এই বোনাসের ভাগীদার একমাত্র তারাই হবেন, যারা নিয়মিত ফরজ বা বাধ্যতামূলক ইবাদাত সমূহ পালন করে থাকেন। সারা বছর ফরজ-ওয়াজিব, হালাল-হারামের কোন ধার না ধেরে একরাতের ইবাদাতে যারা কেল্লা ফতেহ করতে চান, দয়া করে বিষয়টি আরেকবার ভাবুন। বোনাস সেই সব কর্মচারীদের জন্যই ঘোষনা করা হয় যারা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কর্মচারী। অনিয়মিত মজুরদের জন্যও বোনাস হয় না।
অতএব আসুন, পবিত্র ভাগ্য রাজনী তথা লাইলাতুল ক্বাদর থেকে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করি এবং চেষ্টা করি ইবাদাতের নামে বেদয়াত পরিহার করার। ধন্যবাদ সকলকে।
Source: http://www.amarbornomala.com

No comments:

Post a Comment