Wednesday, September 14, 2011

লাইলাতুল ক্বদর উম্মাতে মোহাম্মাদীর বৈশিষ্ট

লাইলাতুল ক্বদর উম্মাতে মোহাম্মাদীর বৈশিষ্ট
-
মো: মাকছুদ উল্লাহ

মাহে রমজানুল মোবারকের মহত্ব এটা লাইলাতুল ক্বদরের কারণেই। লাইলাতুল ক্বদর সর্ম্পকে মহান আল্লাহ পবিত্র সুরআনে কুরাতুল ক্বদর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাযিল করেছেন। সুরা ক্বদরে বলা হয়েছে নিশ্চয়ই আমি ইহা (কুরআন) নাযিল করেছি ক্বদরের রাতে। আপনি কি জানেন ক্বদরের রাত কি? ক্বদরের রত এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেস্তাগণ এবং তাদের নেতা জিবরাঈল (আ:) অবর্তীর্ণ হন তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এ রাতটি পূর্ণটাই মঙ্গলময় যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এক ক্বদরের রাতের ইবাদাতের মার্যাদা এক হাজার মাস তথা তিরাশি বছর চার মাসের ইবাদাত অপেক্ষা বেশি। কত বেশি সেটা পবিত্র কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি। আর এ মহান রাতটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মতে মোহাম্মাদীকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে বিশেষ বৈশিষ্ট্য স্বরূপ দান করেছেন। পূর্ববর্তী কোন উম্মতকে মহান মর্যাদাসমপূর্ণ লাইলাতুল ক্বদর দান করা হয়নি।
ইবনে বাসীর ইবনে আবি হাতেম থেকে একটি রেওয়াতের উল্লেখ করেছেন। একবার রাসুলুল্লাহ (স:) বনি ইসরাঈলের চারজন সাধক পুরুষের কথা সাহাবায়ে কেরামের এক মজলিশে আলোচনা করছিলেন। চারজন হলেন, আইয়ুব, জাকারিয়া, হিজকিল ইবনে আজুয় ও ইউশা ইবনে নূন। তারা চারজন সুদীর্ঘ আশি বছর ধরে অবিরত ভাবে আল্লাহ ইবাদাত করেছেন। এমনকি এত দীর্ঘ সমযের মধ্যে তারা চোখের পলক গড়ার মত সময়ও আল্লাহর নাফরমানী করেননি। কথাগুলো শুনে সাহাবায়ে কেরাম খুবই আশ্চর্যান্বিত হলেন। এ পেক্ষাপটে মহান আল্লাহ সুরা ক্বদর নাযিল করে উম্মতে মোহাম্মদীর শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি জানিয়ে দেন। ইবনে জারির (র:) অন্য একটি ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন একবার রাসুলুল্লাহ (স:) বনি ইসরাঈলের এক আবেদের ঘটনা সাহাবায়ে কেরামকে শুনালেন। তিনি সারা রাত আল্লাহর ইবাদাতে মাশগুল থাকতেন। আর সকাল হতেই তিনি জিহাদের জন্য রবের হয়ে পড়তেন। এভাবে দীর্ঘ এক হাজার মাস তিনি কাটিয়ে দেন। ঘটনা শুনে সাহাবায়ে কেরাম যারপর নাই বিস্মিত হলেন। তাই মহান আল্লাহ সূরা ক্বদর নাযিল করে জানিয়ে দিলেন বনী ইসরাঈলের আবেদগণ দীর্ঘ দিন ইবাদাতের মাধ্যমে যতটা সওয়াব অর্জন করত উম্মতে মোহাম্মাদীকে খুব অল্প সময়ের ইবাদাতের মাধ্যমে তার চেয়েও বেশি সওয়াব অর্জনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। উম্মতে মোহাম্মাদী যদি শুধু মাত্র ক্বদরের একটি রাত ইবাদাত করে তালে বনি ইসরাইলের আবেদগণের হাজার মাস ইবাদাত অপেক্ষা অধিক সওয়াব লাভ করবে। সুরা ক্বদর নাযিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (স:) ও সাহাবায়ে কেরাম খুশি হয়ে গেলেন।
লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে সুরা দুখানের ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে এ বরকতময় রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ আয়াতটির বক্তব্যকে অনুসরণ করে অনেকে বলে থাকেন ক্বদরের রাতে আগামী এক বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন’ মুসলিম শরীফের এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ (স:) বলেছেন, আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েত দ্বারা এদ্বীনের সমাধান হয়। তিনি বলেছেন, আগামী এক বছরে বৃষ্টি, হায়াত, মউত ইত্যাদি লাইলাতুল ক্বদরে নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পুর্বে সমগ্র সৃষ্টির যে ভাগ্য লিপি লিখিত হয়ে লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আছে তা থেকে উপরোক্ত বিষয়গুলো নোট করে ক্বদরের রাতে ফেরেশতাদের কাছে প্রদান করা হয়। আর সে জন্যই এরাতকে ক্বদরের রাত বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত বলা হয় যে সকল ফেরেশতাকে নোট প্রদান করা হয়। তারা হলেন ১। জিবরাইল ২। মিকাঈল ৩। ইসরাফীল ও ৪। আজরাঈল (আ:) ই চারজন। হযরত জিবরাইল (আ”) নবীদের নিকটে ওহী নিয়ে আসতেন। রাসুলুল্লাহ (স:) এর ইন্তিকালের পর জিবরাঈল (আ:) এর পৃথিবীতে আগমন বন্ধ হয়ে গেছে। রাসুলের ইন্তিকালের পর তিনি প্রতি বছরে একবার জিবরাঈল (আ:) রহমতের ফেরেশতাদের একটি দল নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং আল্লাহর ইবাদাতে মগ্ন নেককার বান্দাদের জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন।

No comments:

Post a Comment